বসন্তের প্রথম দিনেই ভালোবাসা দিবস
আরিফ হোসেন
আপলোড সময় :
১৪-০২-২০২৪ ০৯:৫৮:৪৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় :
১৪-০২-২০২৪ ০৯:৫৮:৪৫ পূর্বাহ্ন
চলো বসন্তের গান গাই,
চলো বসন্তের রঙে মন রাঙাই 'শুভ বসন্ত'
আরিফ হোসেন: চারপাশে গাছে গাছে ফুলের সমারোহ আমাদের জানান দিচ্ছে বসন্ত এসে গেছে। বাংলাদেশ ষড় ঋতুর দেশ, যার মধ্যে বসন্তকাল অন্যতম।
সবার কাছে অনেক জনপ্রিয়। কারণ এই ঋতুতে গাছে গাছে কোকিলের ডাক ও বিভিন্ন রকমের ফুলের দেখা মিলে। শিমুল ফুল, কৃষ্ণচূড়া ফুল সহ আরো নানান ধরনের আকর্ষণীয় ফুলের দেখা পাওয়া যায়। বসন্ত ঋতু বাংলা নববর্ষের প্রথম ঋতু। এটি ফাগুন ও চৈত্র মাস জুড়ে বিস্তৃত। বসন্ত ঋতুকে প্রায়শই প্রেম, সৌন্দর্য ও নতুন সূচনার ঋতু হিসেবে দেখা হয়। ২০২৪ সালের বসন্তের ১ম ফাল্গুন শুরু হবে ১৪ই ফেব্রুয়ারি (বুধবার) ও শেষ হবে ১৪ই এপ্রিল (শনিবার)।
গত বারের মতো এবারও বাঙালি বসন্ত উৎযাপন করবে ১৪ ফেব্রুয়ারি। গত বছরেও ভালোবাসা দিবসের দিনেই পালিত হয়েছিল পহেলা ফাল্গুন। বদলে গেছে বাংলা বর্ষপঞ্জি। নতুন সংশোধিত বর্ষপঞ্জিতে পহেলা ফাল্গুন অর্থাৎ বসন্তের প্রথম দিনেই হচ্ছে ভালোবাসা দিবস।
বসন্তকাল একটি সুন্দর ঋতু। এই ঋতুতে প্রকৃতি নবজীবনে পূর্ণ হয়। বসন্তের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বসন্ত প্রেমীরা অংশগ্রহণ করেন। একই দিনে ইংরেজি বর্ষপঞ্জির ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয় সারা বিশ্বে।
বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, বসন্তের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা ফাল্গুন ছিল ১৩ ফেব্রুয়ারি। তবে বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের পর একই দিনে পড়ছে বসন্ত উৎসব আর ভালোবাসা দিবস। বাংলা একাডেমির তথ্য অনুসারে, সংশোধিত বর্ষপঞ্জিতে বৈশাখ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত প্রথম ছয় মাস ৩১ দিন, কার্তিক থেকে মাঘ মাস ৩০ দিন এবং ফাল্গুন মাস ২৯ দিন ধরে গণনা করা হবে। তবে গ্রেগরীয় পঞ্জিকার অধিবর্ষে (লিপ ইয়ার) ফাল্গুন মাস ২৯ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিন গণনা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাই সেভাবেই সাজানো হয়েছে নতুন বাংলা বর্ষপঞ্জি। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, প্রাচীন আমল থেকেই বাঙালি বসন্ত উৎসব পালন করে আসছে।
হিন্দুদের পৌরাণিক উপাখ্যান ও লোককথাগুলোতে এই উৎসবের উল্লেখ পাওয়া যায়। হিন্দু বৈষ্ণবরা এটি বেশ আয়োজনের সঙ্গে পালন করে থাকেন। এরও আগে ভারতবর্ষের পূর্বাঞ্চলের প্রাচীন আর্য জাতির হাত ধরে এই উৎসবের জন্ম। খ্রিস্টের জন্মেরও বেশ কয়েক শ' বছর আগে থেকে উদযাপিত হয়ে আসছে এই উৎসবটি। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দে পাথরের উপর খোদাই করা এক পাথরে পাওয়া গেছে এই উৎসবের নমুনা।
এ ছাড়া হিন্দুদের পবিত্র গ্রন্থ বেদ ও পুরাণেও রয়েছে এই উৎসবের উল্লেখ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময়কাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে বসন্ত উৎসব পালনের রীতি চলে আসছে। বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। তবে খুব বেশি ঘটা করে পালন হয় ১৫৮৫ সালে সম্রাট আকবর বাংলা বর্ষপঞ্জি হিসেবে আকবরি সন বা ফসলী সনের প্রবর্তন করার পর। একইসঙ্গে প্রবর্তিত হয় প্রতি বছর ১৪টি উৎসব পালনের রীতিও। এর মধ্যেই অন্যতম ছিল বসন্ত উৎসব।
ফাল্গুনের প্রথম দিনকে বাংলাদেশে পহেলা ফাল্গুন ও বসন্ত বরণ উৎসব হিসেবে উদযাপন করা হয় যা ১৯৯১ সালে সর্বপ্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ কর্তৃক আয়োজন করা হয়। শীতের রুক্ষতাকে পিছনে ফেলে প্রকৃতিকে আবার নতুন রূপে সাজিয়ে তোলার আগমনী বার্তা নিয়ে আসে বসন্ত।
গাছে গাছে নতুন পাতা গজায়। ফুলের মুকুল আসে। পাখি গান গায়। আর বাতাসে ভাসে মিষ্টি ফুলের ঘ্রাণ। প্রজাপতিরা রঙিন ডানা মেলে জানায় ঋতুরাজের আগমনী বার্তা। বসন্ত শুধু প্রকৃতিতেই নয় মানুষের মনেও জাগায় প্রাণের ছোঁয়া। তাই বসন্তের প্রথম দিনটিকে উদযাপন করতে সবাই মেতে ওঠে উৎসবে। নিজেকে সাজিয়ে তোলে বসন্তের রঙে। ফাল্গুন নামটি এসেছে মূলত ফাল্গুনী নামে নক্ষত্র থেকে। বেশ আয়োজন করেই বাঙালি বরণ করে নেয় ঋতুরাজ বসন্তকে। তাই তো ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত।
বর্তমানে বাংলাদেশের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে বসন্ত বরণ। সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে বসন্তের প্রথম দিন তথা পহেলা ফাল্গুন অন্যতম বৃহৎ সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে ।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Daily Sonali Rajshahi
কমেন্ট বক্স