1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. খেলাধুলা
  5. বিনোদন
  6. তথ্যপ্রযুক্তি
  7. সারাদেশ
  8. ক্যাম্পাস
  9. গণমাধ্যম
  10. ভিডিও গ্যালারী
  11. ফটোগ্যালারী
  12. আমাদের পরিবার
ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫ , ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিষ্পাপ’ সাঈদীকে চিকিৎসার মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে,

সেই ডাক্তারের বিচার দাবি জামায়াতের নায়েবে আমিরের

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপলোড সময় : ১৪-০৮-২০২৫ ০৬:৫৮:৫১ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৪-০৮-২০২৫ ০৬:৫৮:৫১ অপরাহ্ন
সেই ডাক্তারের বিচার দাবি জামায়াতের নায়েবে আমিরের ফাইল ছবি
 
আজ ১৪ আগস্ট, আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর দ্বিতীয় শাহাদাত বার্ষিকী। ২০২৩ সালের আজকের এ দিনে হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তবে সাঈদীকে ‘নিষ্পাপ ও সম্পূর্ণ নির্দোষ’ উল্লেখ করে তাকে চিকিৎসার মাধ্যমে হত্যার অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এবং রাজশাহী-১ (তানোর- গোদাগাড়ী) আসনের সাবেক এমপি ও আগামী নির্বাচনে সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। হাসপাতালে সাঈদীর চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা সেই চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকালে ঢাকা মেইলকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ দাবি জানিয়ে ঘটনার বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন জামায়াতের নায়েবে আমির।
 
শুরুতেই কুরআনের আয়াত তুলে ধরে সাঈদীর ইন্তেকাল প্রসঙ্গে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘প্রথম কথা হলো, আল্লাহ তায়ালা মানুষের হায়াত যখন যেখানে যা নির্ধারণ করে রেখেছেন, সেটা হবেই। যেভাবেই হোক ওই সময়ই সেটা ঘটবে; এক মূহুর্ত আগেও হবে না, এক মূহুর্ত পরেও হবে না। কুরআনে আল্লাহ তায়ালা এটা স্পষ্টভাবে বলেছেন।’
 
তিনি বলেন, ‘দুই নম্বর কথা হচ্ছে, শহীদের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, সবচেয়ে বড় জিহাদ হলো, অন্যায়ের বিরুদ্ধে জালিম সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ করা। তারমধ্যে আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী রহিমাহুল্লাহ, উনি কিন্তু সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীনভাবে বক্তব্য রেখে গেছেন, ফিজিক্যালিও তিনি অনেক জায়গায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কথা বলেছেন, মিটিং করেছেন, চেষ্টা করেছেন। যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কাজ করতে গিয়ে জীবন চলে যায়, এটা তারই বহিঃপ্রকাশ। জালিমের বিরুদ্ধে হক্ব কথা না বললে জালিম তাকে জেলখানায় দিত না, আমৃত্যু জেলে দিতও না। কিন্তু তারা এটার কারণে দিয়েছে। যেহেতু সাঈদী অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে মারা গেছেন, সেহেতু তিনি শহীদ। আমরা শহীদ হিসেবে কামনা করছি, আল্লাহ যেন তার শাহাদাতকে কবুল করে নেন।’
 
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে সাঈদীকে চিকিৎসা প্রদানে অবেহলার অভিযোগ করেন সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, তারা অন্যায় করেছে তাকে উপযুক্ত চিকিৎসা না দিয়ে। প্রথমে নিয়ে গেল গাজিপুরের হাসপাতালে, কোনো দরকার ছিল না। হার্টের চিকিৎসা হয় সাধারণত ঢাকার বড় দুয়েকটা বড় হাসপাতালে, সেখানে ডাইডরেক্ট নিয়ে আসা দরকার ছিল। সময় কিল করে ওখানে (গাজিপুর) নিয়ে যাওয়া মোটেও ঠিক হয়নি। তারপর এমন একটা লোকের কাছে চিকিৎসা দিল, ঘাদানিকের সেই লোকটা সাঈদী সাহেবের মৃত্যু কামনা করে স্লোগান দিয়েছিল, আমরা বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছি। যেই জায়গায় চিকিৎসক নিয়োগ করলো, এরকম বিতর্কিত চিকিৎসককে দেওয়া উচিত হয়নি। কিন্তু তারা (সরকার) তাও দিয়েছিল।’
 
আল্লামা সাঈদীকে ভুল চিকিৎসায় হত্যার অভিযোগ করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির। একইসাথে তার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা তৎকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামানসহ সংশ্লিষ্টদের বিচারের দাবি জানান বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘সেজন্য আমরা যেটা বলতে চাই যে, এদের চিকিৎসাটা ছিল ভুল এবং সাঈদীর প্রতি ইনসাফ করা হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় আসছে, মানুষেরাই বলেছে যে, তাকে ভুল চিকিৎসা করে হোক আর ইচ্ছাকৃত চিকিৎসার মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। আমরা তখন থেকেই তদন্ত দাবি করেছি, যারা দোষী তাদের শাস্তি হওয়া দরকার। ভবিষ্যতে যাতে কোনো মানুষ এভাবে সুবিচার থেকে বঞ্চিত না হয়। এখনো আজকে তার দ্বিতীয় শাহাদাত বার্ষিকীতে আমরা এটা দাবি করছি।’
 
ওই সময় সাঈদীর জানাজা নিয়ে আওয়ামী সরকারের আচরণের কথা তুলেন ধরেন অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সাঈদীর জানাজার নামাজ ঢাকায় পড়তে দেওয়া হয়নি। তার বৃদ্ধা স্ত্রীকে সাক্ষাত করতে দেওয়া হয়নি। আমরা বলেছিলাম, কিন্তু দেয়নি। বরং বিভিন্নভাবে পুলিশের অত্যাচার দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে তারা আমাদের বিরুদ্ধেই একটা মামলা দিয়েছিল। এগুলো নিন্দনীয় ও অমানিক আচরণ ছিল সরকারের, জিঘাংসাপূর্ণ আচরণ করেছিল। এটা না করে যদি মানবিকভাবে ট্রিট করত, তাহলে এটা কিছু বলার ছিল না। কিন্তু অমানবিকভাবে তারা ব্যবস্থাটা করেছে।’
 
অবশেষে সাঈদীর নিজ জেলা পিরোজপুরে তার জানাজা হয়। জানাজার নামাজে ইমামতি করেছিলেন অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। ওইদিন সাঈদীর মামলার আলোচিত সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি সেখানে এসেছিলেন। ওইদিনের ঘটনার চিত্র তুলে ধরে সাঈদীর মৃত্যুও ‘জুডিশিয়াল কিলিং’ বলে উল্লেখ করেন জামায়াতের নায়েবে আমির। তিনি বলেন, ‘আমি যখন গেলাম, পিরোজপুরে জানাজায় ইমামতি করলাম, ওখানে এসেছিল হিন্দু সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি, সে আমাকে দীর্ঘ কথা বলল, কাঁদতে কাঁদতে বলল। তাতে বুঝলাম যে, একজন নিষ্পাপ মানুষকে যে হত্যা করেছে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মতো, আজীবন-আমৃত্যু জেল মানে তো মৃত্যুই হলো জেলখানায়। ওখানেই মরতে হবে, মরারই ফায়সালা। এ কাজটা করে অনেক অন্যায় করেছে, একজন ভাল মানুষের প্রতি অবিচার করেছে। সুখরঞ্জন বালির মুখ থেকে আমি যা শুনেছি এবং উনি যা বলতে চান, সে দিক থেকে আমি বলতে চাই যে, সাঈদীর বিচার অন্যায় বিচার করা হয়েছে।’
 
আওয়ামী আমলের বিচারক ও সংশ্লিষ্টদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিচারক ও তাদের অনেকে বর্তমানে জেলখানায় গেছেন। আজ হোক কাল হোক তাদের বিচার হবে ইনশাআল্লাহ। তবে ন্যায়বিচার যাতে হয়, অন্যায় করলে অবশ্যই তার একটা পাওনা যাতে হয়। এমনভাবে তাদের বিচার করা উচিৎ যাতে, কেউ ভবিষ্যতে এভাবে অন্যায় না করে, মানুষের অধিকার নিশ্চিতভাবে ফিরিয়ে দেয়। এটাই আজকে সাঈদীর শাহাদাত বার্ষিকীতে দাবি জানাচ্ছি।’
 
সর্বশেষ আল্লামা সাঈদী ও তারা পরিবারের উদ্দেশে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা উনাকে জান্নাতুল ফেরদাউসের মেহমান হিসেবে কবুল করুন এবং তার পরিবার-পরিজনকে ধৈর্যধারণের তাওফিক দান করুন। যাতে তার ছেলেরা এই অন্যায় বিচারের প্রতিশোধ নিতে পারেন। আমরা প্রতিশোধ অন্য কোনোভাবে নয়, বরং তিনি যে আন্দোলন করেছেন আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার জন্য, তা যেন তার পরিবারের সদস্যরা, আত্মীয়-স্বজন এই ইসলাম কায়েমের জন্য তারাও যেন সক্রিয়ভাবে অবদান রাখতে পারেন। ইসলাম কায়েম হলে এটাই হবে উত্তম প্রতিশোধ। বিশেষভাবে তার দুই ছেলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, আল্লাহ তাদের সহান হন ও ধৈর্যধারণের তাওফিক দান করুন।’
 
উল্লেখ্য, আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী মুসলিম বিশ্বের অন্যতম ইসলাম প্রচারক ছিলেন। ১৯৬৭ সাল থেকে পৃথিবীর অর্ধশতাধিক দেশে ইসলাম প্রচার করেছেন তিনি। তার বক্তব্য শুনে হাজার হাজার ভিন্ন ধর্মালম্বী ইসলাম কবুল করেন। দেশে ১৯৮৯-৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ১৯৯৪ সালে কেয়ারটেকার আন্দোলন ও ১৯৯৮ সালের পার্বত্য কালো চুক্তির বিরুদ্ধে রাজপথে সোচ্চার ছিলেন তিনি। আল্লামা সাঈদী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ছিলেন। দলটির মনোনয়নে পিরোজপুর-১ আসন থেকে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। পরে তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান, বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সদস্য, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় পানি সম্পদ কাউন্সিলের সদস্য, কৃষি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় কৃষি পুরস্কারের ট্রাস্টি বোর্ড মেম্বার ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যাকাত বোর্ডের সদস্যসহ অনেক রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
 
২০১০ সালের ২৯ জুন সাঈদীসহ জামায়াতের অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করে তৎকালীন আওয়ামী সরকার। প্রথমে তাকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়। পরে গণ-আন্দোলনের মুখে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ১৩ আগস্ট তিনি অসুস্থ হলে কাশিমপুর কারাগার থেকে তাকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে পিজি হাসপাতালে নেওয়া হয়। ১৪ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টার দিকে ৮৪ বছর বয়সে সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Daily Sonali Rajshahi

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ