বছর না ঘুরতেই আবারও তীব্র ভাঙন গোদাগাড়ীর পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায়
নিজস্ব প্রতিবেদক
আপলোড সময় :
১৭-০৮-২০২৫ ১২:৩৯:৩৬ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় :
১৭-০৮-২০২৫ ১২:৩৯:৩৬ পূর্বাহ্ন
আরিফ হোসেন: বছর না ঘুরতেই আবারও তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে গোদাগাড়ীর চর আষারিয়াদহা ইউনিয়নের পদ্মা নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায়। যুগে যুগে পদ্মার ভাঙন নিঃস্ব করেছে শত সহস্র মানুষকে। অতীতের সেই দুর্বিষহ স্মৃতি যেন কঠিন বাস্তবতা হয়ে আবারও দরজায় কড়া নাড়ছে ভাঙন কবলিত মানুষের ঘরে। ফলে শিগগিরই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করার তাগিদ জানাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্থ ও স্থানীয়রা।
বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে হঠাৎই আগ্রাসী রূপে পদ্মায় স্রোতের সাথে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে পানি। এতে বেড়েছে ভাঙনের তীব্রতা। আগেই আশঙ্কা করেছিল নদী পারের বাসিন্দারা - প্রত্যেক বছরের মতো এবারও গোদাগাড়ী উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী এলাকায় দেখা দিবে তীব্র ভাঙন। সেই শঙ্কা সত্যি করে কিছুদিন ধরে প্রবল স্রোতের কারণে উপজেলার পদ্মাপাড়ের চর আষাড়িয়াদহ, চর বয়ারমারী, চর নওশেরা, হবুপাড়া, জামাইপাড়া, চর দিয়ার মানিকচকসহ আশপাশের এলাকায় নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।
এতে ধান, পাট, ভুট্টাসহ মৌসুমি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গৃহহীন হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার, পানিতে তলিয়ে গেছে শত শত বিঘা জমির ফসল।
চর আষারিয়াদহা ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন জানান গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ভাঙন দেখা দিয়েছে পদ্মায় তবে গত চার থেকে পাঁচ বছর যাবত প্রচুর পরিমাণ ভাঙন শুরু হয়েছে। নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির সহ বহু স্থাপনা ।নদী ভাঙ্গনের ফলে বহু মানুষ তাদের ভিটেমাটি ও সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন আমাদের জমি যায়গা যদি পদ্মায় বিলিন হয়ে যায় তাহলে আমরা যারা কৃষক,শ্রমিক দিনমজুর কোথায় ফসল উৎপাদন করবো,আমরা খাবো কি, কোথায় মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবো। তাই আমি সরকারের কাছে আকুল আবেদন করে বলছি আমাদের চর অঞ্চলের মানুষকে,জমিনকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করুন এবং দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ কাজ যেন শুরু করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিন নতুন বসতবাড়ি ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। বিশেষ করে চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের ১নং ও ২ নং ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশী ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে। অন্যদিকে দীর্ঘদিনের সাজানো সংসার চোখের সামনে মুহূর্তেই নদীতে বিলীন হতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অনেকেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষক। শত শত বিঘা জমির ফসল তলিয়ে গেছে পানিতে, নষ্ট হয়েছে আবাদি জমি। অনেক পরিবার ভবিষ্যতের জীবিকা নিয়ে পরেছে শঙ্কায়। ভাঙনের ভয়ে অনেক পরিবার গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে গোদাগাড়ীর অভ্যন্তরীণ গ্রামগুলোতে চলে গেছে। সেখানে তারা আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বা অস্থায়ী আশ্রয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রায় দের যূগ ধরে প্রতিবছর বন্যার পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যাপক নদী ভাঙ্গন শুরু হয় এবারও ব্যাতিক্রম হয় নি। তবুও এই জনপদ অঞলে হয়নি এখনও স্থায়ী বাঁধ।
পদ্মা নদীর ভাঙন একটি গুরুতর সমস্যা যা গোদাগাড়ী চর আষারিয়াদহা ইউনিয়ন এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত করছে। ভাঙনের কারণে অনেকে তাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ফসলি জমি হারাচ্ছে। বিশেষ করে, ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ভাঙন বেশি দেখা যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভাঙন শুরু হলে তারা তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকে চোখের পলকে তাদের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হতে দেখেছেন। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে, তবে তা যথেষ্ট কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে থাকা মানুষজন তাদের বাড়িঘর, জিনিসপত্র এবং গবাদি পশু সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন। এই পরিস্থিতিতে, ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Daily Sonali Rajshahi
কমেন্ট বক্স