1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. খেলাধুলা
  5. বিনোদন
  6. তথ্যপ্রযুক্তি
  7. সারাদেশ
  8. ক্যাম্পাস
  9. গণমাধ্যম
  10. ভিডিও গ্যালারী
  11. ফটোগ্যালারী
  12. আমাদের পরিবার
ঢাকা , রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫ , ২০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিশ্ব শিক্ষক দিবস ও কিছু কথা- হায়দার আলী

নিউজ ডেস্ক
আপলোড সময় : ০৫-১০-২০২৫ ০৮:২১:১৯ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৫-১০-২০২৫ ০৮:২১:১৯ অপরাহ্ন
বিশ্ব শিক্ষক দিবস ও কিছু কথা- হায়দার আলী
৫ অক্টোবর রোববার ৩২তম বিশ্ব শিক্ষক দিবস বিশ্বের অন্য অন্য দেশের মত বাংলাদেশে পালন হচ্ছে এ জন্য দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। বেসরকারি শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন, কর্মবিরতি, ক্লাস বর্জন, শ্রেণি কক্ষে তালা ঝুলিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে গিয়ে দিনের পর দিন বিক্ষোভ সমাবেশ, স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন।

স্থানীয়, জাতীয় দৈনিক, অনলাইন পত্রিকা, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষকদের বিভিন্ন বৈষম্য, সমস্যা, সমাধান নিয়ে বিস্তর লেখা লেখি হয়েছে কিন্তু বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। যেই লাউ সেই কদু। বেসরকারি শিক্ষকদের অবস্থাটা যেন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানি চুক্তির মত। পানি নিয়ে দু দেশের মধ্যে অনেক মাপজোক, গবেষণা, কয়েকবার চুক্তি হয়েছে কিন্তু মোতাবেক পানি পায়নি বাংলাদেশ। ফলে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ অনেক অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। শিক্ষকগণ না খেয়ে মারা গেলেও যেন দেখার কেউ নেয়।

কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার জন্য শিক্ষক : শিক্ষক স্বল্পতা পূরণে বৈশ্বিক অপরিহার্যতা’, বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের বেতনভাতার নজিরবিহীন বৈষম্যে - এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে বিশ্বের সকল শিক্ষকের প্রতি সম্মান জানাতে প্রতি বছরের মতো গত বছর পালিত হয়েছিল, ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’। ওই বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ঠধষঁরহম ঃবধপযবৎ াড়রপবং : ঃড়ধিৎফং ধ হবি ংড়পরধষ পড়হঃৎধপঃ ভড়ৎ বফঁপধঃরড়হ

শিক্ষকের কণ্ঠস্বর : শিক্ষায় নতুন সামাজিক অঙ্গীকার’। এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ‘বিশ্ব শিক্ষক, ২০২৪’ উপলক্ষ্যে কর্মসূচি নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বলছে, জাতি গঠনে শিক্ষকের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাদের সম্মাননা জানানো হচ্ছে। আর এর মাধ্যমে অন্য শিক্ষকদেরও উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে ৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ উদ্যাপন করা হয়ে থাকে।

নীতিমালা অনুযায়ী, দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব উপজেলা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ উদ্যাপন করা হয়েছে, এবছর করার জন্য প্রস্তুতি চলছে। দিবসের কর্মসূচিতে জানানো হয়েছিল, বিশ্ব শিক্ষক উপলক্ষ্যে রাজধানী ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সকাল ১০টায় শিক্ষক দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ এবং ইউনেস্কো ঢাকা অফিসের প্রধান ড. সুসান ভাইজ। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রেখেছিলেন।

প্রধান অতিথি অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ তার বক্তব্যে বলেছিলে, এত অল্প সময়ে শিক্ষকদের অভিযোগ, দাবি-দওয়ার সমাধান দিতে না পারায় নিজেকে অপরাধী মনে করছেন, একইসঙ্গে তিনি শিক্ষকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছেন। রাজনৈতিক সরকার, অন্তর্বর্তী সরকার, আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার বেসরকারি শিক্ষকদের ব্যাপারে যেই লাউ সেই কদু। মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। সবার বেলায় ষোলআনা আর বেসরকারি শিক্ষকদের বেলায় আট আনা। ৯৮ ভাগ শিক্ষার্থীদের ভাগ্য গড়ে দেন বেসরকারি শিক্ষক সমাজ সেই শিক্ষক সমাজের ভাগ্যে শুধু মূলা আর মূলা, তাই তো ৫৪ বছর পরেও আজ বেসরকারি শিক্ষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন সম্ভাব হচ্ছে না।

তাহলে শিক্ষক সমাজ দ্রব্যমূল্যের আগুনের বাজারে কীভাবে বাঁচবে? বিশ্ব শিক্ষক দিবসে বেসরকারি শিক্ষক, কর্মচারীদের অনেক দাবি, আশা আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশা কিন্তু তার প্রতিফলন ঘটেনি। তারা হতাশ হয়েছে। ক্ষোভ করে ফেসবুকে নানা ধরনের মন্তব্য করেছেন। কেননা এমপিওভুক্তিতে শিক্ষক-কর্মচারীরা যে অর্থ পান, তা দিয়ে লাগামহীম দ্রব্যমূল্যের বাজারে তাদের পরিবার চালাতে কষ্ট হয়। এটি যেন দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিদের নজরে আসেনি। হিসাব-নিকাশ করে বিগত দিনে পতিত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করেননি। আন্দোলনরত শিক্ষক নেতাদের নামে, মামলা হামলা চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। অনেক শিক্ষক বিনা কারণে জেল খাটছেন।

সাবেক প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার চালবাজি যা শিক্ষক সমাজ আগেই বুঝতে পেরে ছিলেন। সরকার আসে সরকার চলে যায় বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের একের পর এক মুলা ঝুলিয়ে রাখে, শিক্ষক সমাজের ভাগ্যের পরিবর্তন নাহি হয়। শিক্ষায় গতি আনয়নের ক্ষেত্রে জাতীয়করণের বিকল্প নেই। জাতীয়করণ হলেই শিক্ষায় গতি আসবে শতভাগ। বর্তমান শিক্ষা বাজেটের যে অতিরিক্ত বরাদ্দ তার অর্ধেক খরচ করেই জাতীয়করণ সম্ভব।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সরকারি বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের হাহাকার ঘোচাবার সুযোগ আছে। প্রয়োজন শুধু আন্তরিকতার। এবার এ বিপুল বাজেটের আংশিক খরচের মাধ্যমে জাতীয়করণ করা সম্ভব। মানসম্মত শিক্ষা ও মেধাবী জাতি গঠনে জাতীয়করণের বিকল্প নেই। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশের তুলনায় শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে আমাদের অবস্থান তলানিতে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা হাস্যরসের খোরাক হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। সর্বোচ্চ পর্যায়ে শিক্ষাখাতকে প্রাধান্য দেয়া, মাধ্যমিক শিক্ষাকে গতিশীল করা, মাধ্যমিক পর্যায়ে মেধাবিকাশে প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা চালুকরণ জাতীয়করণ ছাড়া সম্ভব নয়।

বর্তমানে শিক্ষকতার পেশাটাকে মুখে মুখে সম্মানজনক পেশা বলা হলেও গ্রেড অনুপাতে বেতন, কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর বোর্ডের আচরণ, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা আর ৫০ উৎসবভাতা, প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেল থেকে বঞ্চিত রাখা কিন্তু অন্যটা প্রমাণ করে। আমরা যে শতভাগ অবহেলা আর বঞ্চনার শিকার তা কিন্তু এই বেতন ও সামান্য সুবিধা প্রমাণ করে। এই পেশার এই অবমূল্যায়ন আর আটআনা সুবিধা প্রত্যক্ষ করে মেধাবীরা এ পেশায় আসতে চায় না। এনটিআরসিএ নিয়োগ পেয়েও অনেক যোগদান করেনি। এতে আরও প্রমাণ হয় যে শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। অন্যান্য চাকরি বঞ্চিত হলে একান্ত বাধ্য হয়ে তারা এ পেশায় এলেও বেতন, ভাতা ও মূর্খ পরিচালনা কমিটি দেখে পড়ানোর মানসিকতা পরিবর্তন করে তারা এটাকে চাকরি হিসেবে বেছে নেয়া সেবা হিসেবে নয়। এটা জাতির জন্য অশনিসংকেত। অভাবগ্রস্ত শিক্ষকরা মানসিক ভাবেও বিপদ্গ্রস্ত। অভাব যখন চারদিকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে তখন নিদারুণ কষ্টের ভাণ্ডার থেকে সৃজনশীল কিছু পাওয়ার চিন্তাই বৃথা।

তাই অতিশীঘ্র জাতীয়করণ না হলে এ শিক্ষা ব্যবস্থায় অরাজকতা বৃদ্ধি পাবে, শিক্ষায় প্রতিযোগিতা আরও কমবে এবং এসব সেক্টরে প্রচণ্ড অসন্তুষ্টি দেখা দেবে। আমাদের দেশের চেয়েও অনুন্নত বেশ কয়েকটি এশিয়ান রাষ্ট্রে শিক্ষা খাতে সর্বনিম্ন জিডিপি ৩.৫০ বা ৪ শতাংশ সেখানে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হয়েও আমাদের জিডিপি ২.০৯ শতাংশ। এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। দেশের মাধ্যমিক শিক্ষা, উচ্চ শিক্ষা ও মাদ্রাসাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রাণবন্ত করতে, আশানুরূপ ফলাফল পেতে জাতীয়করণ একান্ত প্রয়োজন। বিশাল বাজেটের আংশিক এবং প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের আয় জমা নিয়ে জাতীয়করণ করলে শিক্ষক/শিক্ষার্থী যেমন উপকৃত হবে তেমনি আমাদের শিক্ষায় আন্তর্জাতিক মান ও কৌশল অবলম্বন করে বাস্তবিক প্রয়োগ সম্ভব হবে।

বেসরকারি শিক্ষকদের হাহাকার নিরসনে এবারই জাতীয়করণের মোক্ষম সুযোগ। ব্যয়ের অতিরিক্ত অর্থে জাতীয়করণ সম্ভব। মেধাবীদের শিক্ষকতায় আনতে, শিক্ষায় প্রাণ ফিরাতে জাতীয়করণের বিকল্প নেই।

১৯৪৮ সালে সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে শিক্ষার অগ্রগতি, মানবজাতির ক্রমোন্নতি এবং আধুনিক সমাজের বিকাশ সাধনে শিক্ষক সমাজের অপরিহার্য ভূমিকা ও অবদানের কথা জোরের সাথে ঘোষণা করে শিক্ষকগণ যাতে এসব ভূমিকা পালনের জন্য উপযুক্ত সম্মান ও মর্যাদা ভোগ করতে পারেন তা সুনিশ্চিত করার অঙ্গীকার ঘোষণা করা হয়েছে।

১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর ইউনেস্কোর উদ্যোগে শিক্ষকদের মর্যাদা সম্পর্কে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক বিশেষ আন্তঃসরকার সম্মেলন বিশ্বব্যাপী শিক্ষকদের অধিকার, কর্তব্য ও মর্যাদা বিষয়ক আন্তর্জাতিক দলিল ‘ইউনেস্কো/আইএলও সনদ’ স্বাক্ষরিত হয়। ওই দিবসটি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। শিক্ষকেরা মানুষ গড়ার কারিগর, জাতি গঠনে তাদের ভূমিকা বেশী। দেশের ৯০ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেসরকারি শিক্ষকগণ শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন, পাসের হার বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছেন কিন্তু সত্য তারা বেতন বৈষম্য, মেডিক্যাল, ৫০ ভাগ ঈদ বোনাস, বাড়ীভাড়াসহ নানামুখী সমস্যায় মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। তাদের নুন আন্তে পান্তা ফুরায় অবস্থা।

বেসরকারি শিক্ষকদের প্রাণের দাবি, শিক্ষক দিবসে বেসরকারি শিক্ষকদের শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করা হোক, এ কাজ টি করতে পারেন প্রফেসর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড হলে শিক্ষকরা শিক্ষার মেরুদন্ড। কিন্তু আজ শিক্ষক সমাজ অবহেলিত ও বিভিন্নভাবে হয়রানি -নির্যাতনের শিকার। শিক্ষকদের চাকরির নিরাপত্তা, আর্থিক সচ্ছলতা, সামাজিক মর্যাদা নেই বলে মেধাবীরা এই পেশায় আসতে চান না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষকরা রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হয়ে চাকরি হারিয়ে পথে পথে ঘুরছেন। শিক্ষকদের চাকরির নিরাপত্তা নেই বলেই আজ শিক্ষার বেহাল অবস্থা।

এলাকার কিছু কুচক্রী মহল, তথাকথিত কিছু শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে, প্রভাবিত করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তাদেরকে ফিরিয়ে আনছে। স্থানীয় প্রশাসন, সেনাবাহিনী বিষয়টি বুঝতে পেরে শিক্ষা উপদেষ্টার নির্দেশে এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে থাকায় বিষয়টি অনেকটা কমে গেছে। একশ্রেণীর সুবিধাবাদী, মামলাবাজ, চাঁদাবাজ নেতা মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি করতে ২০১৮ ইং সালের ঘটনা উল্লেখ করে শিক্ষা প্রধান যাদের কোন আওয়ামীলীগের পদ পদবি নেই, এমন কী আওয়ামীলীগের প্রাথমিক সদস্য পদ নেই তাদেরও মামলায় হয়রানি ও মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি করার জন্য আসামি করা হয়েছে। তবে কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ, সহকারী প্রধান, সহকারী শিক্ষক আওয়ামীলীগ দলীয় পদ-পদবি গ্রহণ করে মাদার অফ ম্যাফিয়া অধীনে অনুষ্ঠিত সকল নির্বাচনে নিয়ম ভঙ্গ করে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছেন। লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে হাজার হাজার ব্যালট পেপারে আগাম নৌকায় সিল মেরে আওয়ামীলীগ প্রার্থীদের বিশাল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ওইসব সুবিধাবাদী বিএনপির নেতারা রহস্যজনক কারণে কোন কথা বলছেন না। মামলা করলেও তাদের আসামি করছেন না।

এমনকি পদপদবীধারী আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলালীগের নেতারা নিয়োগবানিজ্য, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, হাটঘাট, করিডোর, কাস্টম, সাব-রেজিস্টার অফিস, বালুমহাল, জলমহল, খাসপুকুরসহ বিভিন্নভাবে কোটি কোটি কাল টাকার সম্পদ গড়েছেন তাদেরকে আসামি না করে বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মী, সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিষ্টসহ তৃণমূল বিএনপির কর্মী, শ্রমিক, কলেজ শিক্ষকেও আসামি করেছেন ফলে দেশে দলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে আজ পর্বতসম বৈষম্য বিদ্যমান। সরকারি বেসরকারি স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষক-কর্মচারীদের সমযোগ্যতা ও সমঅভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও সরকারি স্কুল ও বেসরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেলে পার্থক্য রয়েছে। সরকারি স্কুল-কলেজের ছাত্রদের যে সিলেবাস বেসরকারি স্কুল-কলেজের ছাত্রদের ও একই সিলেবাসে পড়ানো হয়। কিন্তু তাদের পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা ও বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট দেয়া হয়।

আমাদের বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন স্কেলের শিক্ষক কর্মচারীদের ৫০% উৎসব ভাতা দেওয়া হয়। বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের সাথে ইহা বিমাতাসুলভ আচরণের বহিঃপ্রকাশ। শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সর্বপ্রথম বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের ১/১/১৯৮০ থেকে জাতীয় বেতনর স্কেলের অন্তর্ভুক্ত করেন এবং ৫০% বেতন স্কেল প্রদান করেন। পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট হুসাইন মুহম্মদ এরশাদ ১০%+১০% = ২০% প্রদান করেন। ১৯৯৪ সালের শিক্ষক আন্দোলনে তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১০%, ২০০০ সনে আন্দোলনে তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০% এবং সর্বশেষ ২০০৬ সনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১০% বেতন প্রদান করে ১০০% এ উন্নীত করেন। এখন চাকুরি জাতীয়করণের কোন বিকল্প নেই। চাকুরি জাতীয়করণের জন্য সরকারের অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন নেই। বর্তমানে শিক্ষক কর্মচারীরা সরকার থেকে ১০০% বেতন পান। এজন্য সরকারকে প্রদান করতে হয় প্রতি মাসে প্রায় ১০০০ কোটি টাকা মাত্র। ১২ মাসে সরকারকে দিতে হয় ১২০০০ কোটি টাকা মাত্র। প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হলে সরকারকে প্রদান করতে হবে মোট প্রায় ১৭৮২০ কোটি টাকা প্রায়। বর্তমান সরকার বেতন বাবদ প্রদান করছে ১২০০০ কোটি টাকা। অতিরিক্ত প্রদান করতে হবে প্রায় ৫৮২০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারের আয় হবে প্রায় ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।


শিক্ষকগণ হচ্ছেন জাতির বিবেক ও মূল্যবোধ সংরক্ষণের ধারক ও বাহক। শিক্ষার সংস্কার, সম্প্রসারণ ও মান উন্নয়নে সরকার বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিবেন বলে শিক্ষক সমাজ প্রত্যাশা করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন দিনে শিক্ষক দিবস পালন করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন দেশ পৃথক পৃথক তারিখে এই দিবসটি পালিত হয়। পাঠকদের জন্য কিছু দেশের শিক্ষক দিবস সম্পর্কে তুলে ধরা হলো- ভারতে ৫ সেপ্টেম্বর ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের জন্মজয়ন্তীর দিনে শিক্ষক দিবস পালিত হলেও, বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয় ৫ অক্টোবর।


এ ছাড়াও বিভিন্ন দেশ পৃথক পৃথক তারিখে এই দিবসটি পালিত হয়। এখানে জানুন এমন কয়েকটি দেশের ব্যাপারে। কলম্বিয়া- ১৫ মে তারিখে স্যান জুয়ান বাওতিস্তা ডি লা সাল্লেকে শিক্ষকদের অভিভাবক-রক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। তিনিই মুক্ত ও সর্বজনীন শিক্ষানীতির রূপরেখা তৈরি করেন। পরে সে বছরই দেশের রাষ্ট্রপতি ওই দিনটিকে শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৯৭ সালে দেশের সার্বভৌমত্ব হস্তান্তরের আগে ২৮ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হত। পিপালস রিপাবলিক অফ চাইনাকে দেশের সার্বভৌমত্ব হস্তান্তরের পর ১০ সেপ্টেম্বর পালিত হতে শুরু করে শিক্ষক দিবস। ইন্দোনেশিয়ান টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠার দিনটি হল ২৫ নভেম্বর। সে দিনটিকেই জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ইরানে মোরতেজা মোতাহারির স্মৃতিতে ২ মে তারিখে শিক্ষক দিবস পালিত হয়। ইরাকে ১ মার্চ শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয় ইরাকে। মালয়েশিয়ায় ১৬ মে তারিখটি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়। মালয়েশিয়ায় দিনটিকে ‘হরি গুরু’ নামে ডাকা হয়। নেপালে আশাদ পূর্ণিমার দিনে নেপালে শিক্ষক দিবস পালিত হয়। জুলাই মাসের মাঝামাঝি আসাদ শুক্ল পূর্ণিমা পড়ে। নেপালে এই দিনটিকে বলা হয় গুরু পূর্ণিমা। নিউ জিল্যান্ডে ২৯ অক্টোবর শিক্ষক দিবস পালিত হয় এই দেশে। সিঙ্গাপুওে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম শুক্রবার পালিত হয় শিক্ষক দিবস।

তবে ২০১১ সালের আগে পর্যন্ত পয়লা সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস পালিত হত সিঙ্গাপুরে। দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৫ মে তারিখটি শিক্ষকদের উৎসর্গ করেছে এই দেশটি। রেড ক্রস যুব দলের সদস্যরা হাসপাতালে তাঁদের অসুস্থ শিক্ষকদের দেখতে যান। সেই তারিখটি ছিল ২৬ মে। তবে ১৯৬৫ সাল থেকে তারিখটি বদলে ১৫ মে করা হয়। স্পেনে ২৭ নভেম্বর শিক্ষক দিবস পালিত হয় এই দেশে। থাইল্যান্ডে প্রতিবছর ১৬ জানুয়ারি শিক্ষক দিবস পালিত হয় এখানে। ১৯৫৬ সালের ২১ নভেম্বর সরকারের তরফে একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে এই দিনটিকে শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৪৪ সালে আমেরিকার মৈটে ওয়ায়েটে উডব্রিজ সর্বপ্রথম শিক্ষক দিবসের পক্ষে সওয়াল করেন। পরে ১৯৫৩ সালে মার্কিন কংগ্রেস তাতে সায় দেয়।

১৯৮০ সাল থেকে ৭ মার্চ শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হতে শুরু করে। কিন্তু পরে মে মাসের প্রথম মঙ্গলবার এটি পালিত হতে থাকে। সেখানে এক সপ্তাহ ধরে এইদিনটি পালিত হয়। আর্জেন্টিনায় রাষ্ট্রপতি ডোমিঙ্গো এফ. সার্মিয়েন্টোর স্মৃতির উদ্দেশে ১১ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস পালিত হয় সেখানে। সাংবাদিক, স্যান জুয়ানের রাজ্যপাল, কূটনীতিজ্ঞ, সেনেটর ও রাষ্ট্রপতি ছিলেন তিনি। তিনিই দেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে অত্যাবশ্যক করেন। পাশাপাশি স্থাপন করেন ৮০০টি শিক্ষা ও মিলিটারি প্রতিষ্ঠান-সহ শিক্ষক স্কুলের। গড়ে তোলেন জনসাধারণের জন্য লাইব্রেরি। আমেরিকান মডেলের শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে তিনি ৩২ জন আমেরিকান শিক্ষককে দেশে আমন্ত্রণ জানান।

১৯৪৩ সালে শিক্ষার ওপর পানামায় আয়োজিত ইন্টার আমেরিকান কনফারেন্সে ১১ সেপ্টেম্বরকে প্যানআমেরিকান টিচার্স ডে হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অস্ট্রেলিয়ায় এখানে অক্টোবর মাসের শেষ শুক্রবার শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়। শেষ শুক্রবার যদি ৩১ অক্টোবর হয়, তা হলে ৭ নভেম্বর শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয় অস্ট্রেলিয়ায়। ভুটানে ২ মে এখানে পালিত হয় এই দিনটি। ভুটানের তৃতীয় রাজা জিগমে দোরজি ওয়াঙচুকের জন্মজয়ন্তীর দিনে শিক্ষক দিবস পালিত হয় ভুটানে। তিনিই দেশে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। ব্রাজিলে ১৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবস পালিত হয় ব্রাজিলে। দেশের ডিক্রি পরিচালিত কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এই দিনটি পালন করা শুরু করে। ধীরে ধীরে দেশব্যাপী এই দিনটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এরপর ১৯৬৩ সালে এই দিনটিকে আধিকারিক ভাবে শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১০ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস পালিত হয় চিনে।

১৯৩১ সালে ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি এই দিনটি শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৩২ সালে চিনের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দিনটি শিক্ষক দিবস হিসেবে গৃহীত হয়। আবার ১৯৩৯ সালে এর তারিখ বদলে ২৭ অগস্ট করা হয়, কনফুসিয়াসের জন্মজয়ন্তীকে শিক্ষক দিবস হিসেবে উৎসর্গীকৃত করা হয়। কিন্তু পরে ১৯৫১ সালে পিপলস রিপাবলিক অফ চায়নার সরকার এই দিনটিকে বাতিল ঘোষণা করে। ১৯৮৫ সালে শিক্ষক দিবস পুনরায় পালিত হতে শুরু করে। সে সময় ১০ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষিত হয়। ভিয়েতনামে ২০ নভেম্বর পালিত হয় শিক্ষক দিবস। ১৯৫৭ সালে শিক্ষাবিদদের সঙ্গে একটি বৈঠকে এই দিনটির প্রসঙ্গ উঠে আসে।

পরে ১৯৫৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল মেনিফেস্ট অফ এডুকেটর্স-এর দিন হিসেবে এটি পালিত হত। ১৯৮২ সালে এর নতুন নামকরণ করা হয়। সেটি হল ভিয়েতনামিস এডুকেটর্স ডে। এ ছাড়া, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বাংলাদেশ, বুলগেরিয়া, ক্যামারুন, কানাডা, ক্রোয়েশিয়া, এস্টোনিয়া, জর্জিয়া, জার্মানি, কুয়েত, লিথুয়ানিয়া, মালদ্বীপ, মরিশাস, মোলডোভা, মঙ্গোলিয়া, মায়ানমার, নেদারল্যান্ড, নাইজেরিয়া, নর্থ ম্যাসিডোনিয়া, পাকিস্তান, পাপুয়া-নিউ গিনি, ফিলিপিন্স, পর্তুগাল, কাতার, রোমানিয়া, রাশিয়া, সাউদি আরব, সার্বিয়া, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইউকে এই দেশগুলিতে ৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবস পালিত হয়। বেসরকারি শিক্ষকদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে আগামী শিক্ষক দিবসে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বেসরকারি শিক্ষক সমাজের প্রাণের দাবি একটা সেটা হলো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে জাতীয়করণ করা।

এ ঘোষণার অপেক্ষায় শিক্ষক সমাজ তীর্থের কাকের ন্যায় চেয়ে আছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের জন্য যে বিনিয়োগ হবে সেটা হবে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ, মহৎ, বিনিয়োগ। এ কাজটি করতে পারলে জাতি আপনাদের আজীবন স্মরণ করবেন। লাখ লাখ শিক্ষা পরিবারের সদস্যগণ আল্লাহর নিকট প্রার্থানা করবেন। আর যদি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে জাতীয়করণ সম্ভব না হয় তবে সরকারি স্কুলের শিক্ষক কর্মচারীদের মত বাড়ি ভাড়া, পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাস, চিকিৎসা ভাতা ঘোষণা করলেও বেসরকারি শিক্ষকসমাজ খুশি হবেন ইনশাল্লাহ।

লেখক: মো. হায়দার আলী- সাংবাদিক, কলামিষ্ট

নিউজটি আপডেট করেছেন : Daily Sonali Rajshahi

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ