দেশে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়েই চলেছে ডিমের দাম। তবে হুট করে বেড়ে যাওয়া ডিমের দামের কারণ জানালেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, ঢাকা থেকে মোবাইলে ক্ষুদে বার্তার (এসএমএস) মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ হয় দেশের ডিমের বাজার। তাই অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বারবার ডিমের দাম বেড়ে যায়।
২ জুলাই, মঙ্গলবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে ডিমের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে ডিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী, ডিম ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান।
সভায় ভোক্তার ডিজি বলেন, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের গবেষণায় দেখা যায়, একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৮৮ পয়সা। কিন্তু খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম অনেক বেশি। ডিমের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির সাথে বিপণন সংশ্লিষ্ট লোকজন জড়িত। অধিদপ্তরের অভিযানে দেখা যায়, একই ট্রাকে ডিম রেখে তিনবার হাত বদলের মাধ্যমে বিক্রি করে প্রতিটি ডিম মূল্য গড়ে প্রায় ১ টাকা বাড়ানো হয়।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ডিমের অস্বাভাবিক মূল্য বাড়ালে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ডিমের বাজারে অভিযান পরিচালনা করে। অধিদফতর কর্তৃক পরিচালিত অভিযানের ফলে ডিমের অস্বাভাবিক মূল্য কমেছে। কিন্তু এটা স্বাভাবিক আচরণ নয়।
ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক বলেন, রাত ৩টার সময় এসএমএসের মাধ্যমে সারা দেশে ডিমের দাম বাড়িয়ে দেয়ার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ আছে অধিদফতরের কাছে। যদি অবিলম্বে এ ধরনের কারসাজি বন্ধ না করা হয়, তবে যে সব প্রতিষ্ঠান এর সঙ্গে জড়িত সবগুলোকে বন্ধ করে দেয়া হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। অনেক উপর লেভেল থেকেও এদেরকে ছাড় না দেয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা আছে। যে কোনো মূল্যে এই সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া হবে।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, পাকা ভাউচার ছাড়া ডিমের কোন লেনদেন হবে না। পাকা ভাউচার পাওয়া গেলে আমরা ট্র্যাক করতে পারবো ডিমের ক্রয়মূল্য ও বিক্রয়মূল্য কত এবং কত লাভ করা হয়েছে। এখন অভিযান পরিচালনাকালে পাকা ভাউচার না পাওয়া গেলে আইনানুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভোক্তার ডিজি বলেন, এই সেক্টরকে সুসংগত করতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। ডিম বিক্রয়ের কারসাজির ক্ষেত্রে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মতবিনিময় সভায় হঠাৎ হট্টগোল বেধে যায় উৎপাদনকারী, করপোরেট ব্যবসায়ী ও প্রান্তিক খামারিদের মাঝে। সরগরম হয়ে ওঠা ব্যবসায়ীদের ডেকে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দিতে বললে, আটকে যান অনেকে। তাদের দাবি, সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি পিস ডিমে ২০ থেকে ৩০ পয়সা লাভ করেন তারা। আর এসএমএসের দাম নির্ধারণের বিষয়টিও পুরোপুরি অস্বীকার করেন।
ডিম উৎপাদনকারী একজন প্রান্তিক খামারি বলেন, মধ্যস্বত্তভোগীদের দৌরাত্ম্যে তারা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে তুলনামূলক কম দাম বিক্রির দাবি করেন করপোরেট ব্যবসায়ীরা।
আগামী কয়েকদিনের ভেতর ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১৪০ টাকায় নেমে আসবে বলে মনে করেন ভোক্তার মহাপরিচালক।