‘শিক্ষানগরী’ হিসেবে রাজশাহী শহরের সুখ্যাতি বেশ পুরনো। তবে এবার বিভাগীয় এ শহর ‘চিকিৎসানগরী’ হিসেবে খেতাব পাবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়েছে। আর তা পাবে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) নবনিযুক্ত উপাচার্য প্রফেসর ডা. মোহা. জাওয়াদুল হকের নেতৃত্বে। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে তার সহপাঠীরা এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
এদিন সন্ধ্যায় উপাচার্যের কনফারেন্স রুমে ‘আমরা কজন বন্ধু-৭৮’- এর পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারী কলেজের ১৯৭৮ সালের এইচএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নিয়েই এ প্ল্যাটফর্ম গঠিত। রামেবি উপাচার্য ওই ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাসাও চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
সংবর্ধনা প্রদানপূর্ব আলোচনায় তার সহপাঠীরা বলেন, যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান প্রফেসর ডা. মোহা. জাওয়াদুল হক চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর অনুপ্রেরণা। রামেবিতে ডাইনামিক ভিসি নিয়োগ হয়েছে, বন্ধু জাওয়াদুল যথেষ্ট স্ক্রিলড পার্সন ও শান্ত প্রকৃতির। আমরা হোপফুল, তিনি প্রোডাক্টিভ কিছু করবেন।
১৯৭৮-এইচএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থী ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম বলেন, আমাদের বন্ধুদের ভেতর থেকে ভাইস চ্যান্সেলর পেয়েছি, সফল হোক। তার অভিজ্ঞতা দিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে, সাফল্য লাভ করবে। বন্ধুর প্রতি অজস্র শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।
এ সময় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে কথা বলেন ওই ব্যাচের শিক্ষার্থী ও রাজশাহী বারিন্দ মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল প্রফেসর ডা. মো. এনায়েত উল্লাহ। তিনি বলেন, আমাদের বন্ধু অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন বন্ধু। সেই সময় ফাস্ট ডিভিশন পাওয়া কয়েকজনের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। শিক্ষাবিদ শামসুল ইসলাম বলেন, ডা. জাওয়াদকে ঘিরে আমরা ৭৮-ব্যাচের বন্ধুরা এক জায়গায় হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। খুবই ভাল লাগছে। এ সময় পবিত্র কুরআনের আয়াত তুলে ধরে তার অনুভূতি প্রকাশ করেন।
রেজাউল করিম নামে আরেকজন বলেন, আমাদের রক্তবন্ধু ডা. জাওয়াদ। আগে থেকে বুকে নিয়ে আছি। আজ হঠাৎ বুকে নেয়ার জন্য একত্রিত হয়েছি। আমার উচ্ছাস প্রকাশের বয়স নাই, না হলে আমি নাচতাম। তার ভিসি হওয়ার সংবাদ শুনে আপ্লুত হয়েছি। বন্ধুর সুখী সমৃদ্ধিময় দীর্ঘায়ু ও সাফল্য কামনা করছি। আনোয়ারুল হক বলেন, বন্ধুর জীবনটা যাতে সুখময় হয়, সেটা কামনা করছি।
এ সময় রামেবি উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষাজীবনে তাদের স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য উঠে আসে। তারা বলেন, কলেজে একসাথে হেটে যেতাম। সেই কলেজের জাওয়াদ, আজকের ভিসি জাওয়াদ। কোনো পরিবর্তন নাই। কখনো তাকে উচ্চস্বরে কথা বলতে শুনিনি, একদম ঠান্ডা প্রকৃতির। রামেবি ভিসির পিতারও স্মৃতিচারণ করা হয়। তারা বলেন, বন্ধুর পিতাকে আমরা মসজিদের ইমাম ও শিক্ষক হিসেবে পেয়েছি। তিনি বলিষ্ঠ ও প্রানবন্ত মানুষ ছিলেন, মসজিদের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। মনিরুল ইসলাম নামে একজন বলেন, উনার ফাদার আমার টিচার ছিলেন। খুব আপনজন ছিলেন। দেখা হলে কাছে টেনে নিতেন। ডা. জাওয়াদ যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান।
এ সময় চিকিৎসা প্রসঙ্গেও কথা উঠে আসে। রামেবি ভিসির সাবেক সহপাঠীরা বলেন, কিছু হলেই আমরা ঢাকা দোঁড়াই, দিল্লি, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু যাই। কিন্তু আর নয় দিল্লি, আর নয় চেন্নাই, আর নয় বেঙ্গালুরু। এবার চিকিৎসার পথিকৃৎ হবে রাজশাহী। বন্ধু তার সাধ্যের ভেতরে চিকিৎসা নগরীর প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করবেন। রাজশাহী আগে শিক্ষানগরীর খেতাব পায়। বন্ধু ডা. জাওয়াদুলের নেতৃত্ব এবার রাজশাহী চিকিৎসানগরীর খেতাব পাবে।
সবশেষ কথা বলেন রামেবি উপাচার্য প্রফেসর ডা. মোহা. জাওয়াদুল হক। তিনি বলেন, আমার পরিকল্পনা রয়েছে। এখানে ১২০০ শয্যাবিশিষ্ট বিশেষায়িত একটি হাসপাতাল হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মানে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা হবে। আমি এসবকিছু করার চেষ্টা করব। তিনি বলেন, আমি শিক্ষকতার সঙ্গে ছিলাম। শিক্ষকতা আমার নেশা, অ্যাডিকশনের মতো। আমি ভালভাবে অবগত। যা যা করা দরকার আমি করবো। তবে আমি সবাইকে পাশে চাই।
অনুষ্ঠানে আব্দুল বাসেত, মো. পিয়ারুজ্জামান, মো. আরিফ, এমদাদুল হকসহ ‘আমরা কজন বন্ধু-৭৮’- এর সদস্যরা স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন। এ সময় তারা রামেবি উপাচার্যের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।