১২ ডিসেম্বর: নরসিংদী-কক্সবাজার হানাদার মুক্ত
আজ ১২ ডিসেম্বর, ঐতিহাসিক নরসিংদী ও কক্সবাজার হানাদার মুক্ত দিবস। দীর্ঘ নয় মাসের একটানা শ্বাসরুদ্ধকর মুক্তিযুদ্ধে হাজারও প্রাণের আত্মত্যাগের বিনিময়ে শত্রুমুক্ত হয় এসব জেলাবাসী।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সম্মিলিত মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর তীব্র প্রতিরোধের মুখে ১৯৭১-এর এদিনে সমগ্র নরসিংদী অঞ্চল পাক হানাদার মুক্ত হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাসে জেলার বিভিন্ন থানায় শতাধিক খণ্ডযুদ্ধ সংঘটিত হয়।
এসময় পাক হানাদার বাহিনীর নির্মমতার শিকার হয়ে নরসিংদীতে ২৭ জন, পলাশে ১১ জন, শিবপুরে ১৩ জন, রায়পুরায় ৩৭ জন, বেলাবতে ১৬ জন ও মনোহরদীতে ১২ জনসহ মোট ১১৬ জন বীর সন্তান শহীদ হন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়াবহ রাতের পর ৪ এপ্রিল পাকিস্তানিদের বিমান হামলায় নরসিংদী শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। এ হামলায় শহীদ হন আব্দুল হক, নারায়ণ চন্দ্র সাহা, চাঁদ মোহন দাস, জগদীস দাস, নির্মল দাস সহ নাম না জানা আরও ৮ জন।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে নরসিংদীর পাঁচদোনা ব্রিজে বিভিন্ন যানবাহন থেকে যাত্রীদের নামিয়ে পাক সেনা ও তাদের দোসর রাজাকাররা নিরীহ মানুষদেরকে হত্যা করে ব্রিজের নিকট গণকবর দেয়।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর মুক্তিযুদ্ধের সূচনাতেই ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-জনতা পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে। শুরু করে দুর্বার আন্দোলন। নরসিংদী জেলায় মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত করা ও যুদ্ধকালীন যারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তারা হলেন- বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা আফতাব উদ্দিন ভূঞা, আবুল হাসিম মিয়া, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, ফজলুল হক খন্দকার, বিজয় চ্যাটার্জি, নূরুল ইসলাম গেন্দু, মোসলেহউদ্দিন ভুঁইয়া, আ. রাজ্জাক ভুঁইয়া, আবদুল মান্নান ভুঁইয়া, মতিউর রহমান মতি মিয়া, মিন্টু সাহা, এনামুল হক প্রমুখ।
দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ শেষে ১২ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় নরসিংদী জেলা এদিনে বিজয়ী বাংলাদেশের রক্তসূর্য খচিত গাঢ় সবুজ পতাকা উঠেছিল জেলার সর্বত্র। স্বাধীনতার দীর্ঘ দিন পর নরসিংদী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অভ্যন্তরে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।
এদিন কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায় অধিনায়ক ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুস সোবহানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রস্থল পাবলিক হল ময়দানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে এ অঞ্চলকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করেন।
এছাড়াও এদিন বগুড়ার আদমদীঘি থানা সদর, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, কুমিল্লার চান্দিনা ও বুড়িচং- এ পাকিস্তানের হানাদার মুক্ত করে স্বাধীন বাংলার লাল সবুজের পতাকা উত্তোলন করা হয়।