সোনালী রাজশাহী: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় ঝাল পুকুর মন্দির কমিটির আয়োজনে চৈত্র্য সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে ঐতিহ্যবাহী লোকোৎসব চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
চড়ক পূজা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লোকোৎসব। বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী, প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তিতে বা চৈত্রের শেষ দিনে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয় এবং বৈশাখের প্রথম দু-তিন দিনব্যাপী চড়ক পূজার উৎসব চলে। এটি চৈত্র মাসে পালিত হিন্দু দেবতা শিবের গাজন উৎসবের একটি অঙ্গ। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে যা চড়ক সংক্রান্তির মেলা নামে অভিহিত।
চড়ক পূজায় বিশেষ বৈশিষ্ট ভক্তের পিঠে লোহার হূক (বরশি) লাগিয়ে গাছে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। হুক লাগানো অবস্থায় ঘুরতে থাকে ভক্ত। ঘোরা শেষ হলে রক্ত বা কাটা চিহ্ন মিলয়ে যায়। অন্তজ সম্প্রদায়ভুক্তদের একটি বড় ধর্মীয় উৎসব হিসেবে এই পূজা ও মেলা বিবেচিত হয়ে আসছে। এই বিশেষ দিনে চড়কপূজা অনুষ্ঠিত হলেও এর প্রস্তুতি চলে টানা পনের দিন। শিব পার্বতীর পালা গেয়ে আয়োজকরা পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়ায়। চাল-ডাল, টাকা-পয়সা, মাগন (ভিক্ষা ) তুলে পূজার খরচ জোগাড় করে। চড়ক পূজাকে ঘিরে এই উৎসব উপভোগে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অগণিত শিশু ও নারী পুরুষের সমাগম ঘটে। শিব-পার্বতীর (হর-গৌরী) পালা উৎসব অন্তজ শ্রেণির মধ্যে দেখা গেলেও এটি আবহমান বাংলার একটি পরিচিতি উৎসব।
রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলায় প্রায় ৪০০ বছরের এই ঐতিহ্য নিয়ে এবারের চৈত্র্য সংক্রান্তি তিথীতে পূজা অর্চনার মধ্যে দিয়ে ভক্তদের মিলনমেলায় অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলার ৩ নং পাকড়ী ইউনিয়ন এর ঝাল পুকুর মন্দির কমিটির আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী চরক মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
হাজার হাজার নর নারী ভক্তদের উপস্থিতিতে এবারের চরক পূজায় পুজারী বলেন, মা শীতলা ও বুড়ি মাতাকে সন্তোষ্ট করতে মূলত চরক পূজা করা হয়। পিঠে বরশী গেঁথে চরকের মাধ্যমে চরকিd ঘুরিয়ে সকল সাম্প্রদায়িক-অধর্মের বিনাশ, অসত্যকে বিতারিত করে শান্তির সনাতনী বার্তা প্রতিষ্ঠিত করাই হচ্ছে চরক পূজার পবিত্র মাহাত্ব্য। ঝাল পুকুর মন্দির কমিটির সভাপতি গণেশ মাহাতো জানান, আমাদের এই চড়ক পূজা যুগ যুগ ধরে আনুমানিক চারশত শত বছর থেকে গড়ে উঠা ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতিক হচ্ছে এই চড়ক মেলা। মূলত স্থানীয় ভক্তদের আর্থিক অনুদানে এই পূজা অর্চনা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সরকারী অনুদান পেলে আমরা আরোও বৃহৎ পরিষরে চড়ক পূজা করতে পারবো। এ পূজাকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের দোকান পাট বসে যা মেলায় রুপান্তর হয়। এছাড়া অনেকে মনোবাসনা ও ভক্তি সহকারে মা শীতলা ও বুড়ি মাতার কাছে মানত করে ফল পায়।