নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড মহিশালবাড়ীতে নবজাগরণ সেচ্ছাসেবী সংগঠনের আয়োজনে মাদক ও ইফটিজিং বিরোধী এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
১০ ফেব্রুয়ারি রোজ শুক্রবার রাত ৮ : ৩০ ঘটিকার সময় নবজাগরণ সেচ্ছাসেবী সংগঠন তরিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে মাদকের বিভিন্ন কুফল দিক নিয়ে অতিথিগনরা বক্তব্য প্রদান করেন।
গোদাগাড়ী উপজেলা এলাকায় মাদক ব্যাবসায়ীদের পাশাপাশি, মাদক সেবনকারী অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা যুব সমাজকে ধংসের মুখে নিয়ে যাচ্ছে।
মাদক একটি ভয়াবহ নেশা যার ছোবলে নিঃশেষ হচ্ছে দেশের তরুন যুবকরা। আর তরুণ যুবকরা
রাষ্ট্র, জাতি ও সমাজের উজ্জ্বল নক্ষত্র, জাতির আগামী দিনের কর্ণধার। তরুণ প্রজন্মই আমাদের দেশ-জাতিকে ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে টেনে নেয়ার বিরাট ভূমিকা রাখে এবং রেখে আসছে যুগে যুগে।
তবে আমাদের দেশের তরুণ ও যুব সমাজের একাংশ নানাভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে মরণ নেশা মাদকের সঙ্গে। এ নেশা এমনই এক নেশা ধীরে ধীরে বিবর্ণ করে দিচ্ছে আমাদের সবুজ তারুণ্যকে।
নষ্ট করে দিচ্ছে দেশের ভবিষ্যত। আমাদের দেশের রয়েছে পর্যাপ্ত তারুণ্যনির্ভর জনশক্তি। দেশের এ মূল্যবান সম্পদ মাদকের চোরাচালান ও অপব্যবহারের কবলে পড়ে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়, উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। নেশার ছোবলে পড়েছে এ যুবসমাজের কর্মশক্তি।
মাদকাসক্ত হয়ে পৃথিবীতে কেউ কিছুই করতে পারেনি নিজেকে ধ্বংস ছাড়া। তাই আসুন মাদক মুক্ত সমাজ গঠনে সামাজিক আন্দোলন শুরু করি। মাদকমুক্ত সমাজই হোক তারণ্যের সমাজ।
মাদক বিক্রেতারা দেশের প্রচলিত আইনকে অমান্য করে নেশার অতলে ডুবিয়ে রেখেছে শহর ও গ্রামগঞ্জকে। বেকারত্বের অভিশাপের পাশাপাশি বিভিন্ন কারণে তরুণরা মাদকাসক্ত হচ্ছে। কেউ কেউ অন্যের সংস্পর্শে গিয়ে এই নেশা দ্রব্যকে গ্রহণ করছে। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অভিভাবক মহল সন্তানকে শাসনে না রাখতে পেরে দ্বারস্থ হচ্ছে আইনের। মাদকদ্রব্য বেচাকেনা রোধকল্পে গোদাগাড়ীসহ রাজশাহী জেলা প্রশাসন মহল মাদক উদ্ধারে কঠোর ভুমিকা পালন করে আসছে। ইতিমধ্যে রাজশাহী জেলা পুলিশ মাদক উদ্ধারে সারাদেশে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে।
মাদকদ্রব্য একজন ব্যক্তিকে শুধু শারীরিক বা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে না, সমাজেও এর ক্ষতিকর প্রভাব ছড়িয়ে দেয়। মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে মাদকাসক্ত ব্যক্তি বদহজম, চরম অবসাদ, আত্মহত্যার প্রবণতা, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, অসংলগ্ন ব্যবহার, দুর্বলচিত্ততা এবং হতাশা ইত্যাদি মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়। এ সামাজিক ব্যাধি থেকে তরুণ সমাজকে যে কোনো মূল্যে রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
মাদকদ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো এবং বিভিন্ন মহলকে জোর প্রচারণা চালাতে হবে, যাতে মাদকের কুফল সম্পর্কে জনগণ সচেতন হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এবং সংগঠনকেও এগিয়ে আসতে হবে এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য পুলিশের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিকে মাদকের কুফল সম্পর্কে অবশ্য সচেতন হতে হবে। একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষ্যে মাদকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে সমন্বিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে আসতে হবে। এ অপরাধ আমাদের সমাজ বিবেককে প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খেয়ে ধ্বংসের অতলগহ্বরে নিয়ে যাচ্ছে। এসব অপরাধ প্রবণতার পেছনে নানাবিধ কারণ বিরাজ করছে।
বিদ্যমান আইনের সঠিক ও কঠোর প্রয়োগের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীকে মানসিক দিক থেকে সংশোধনের প্রচেষ্টা চালানো উচিত। যাতে এ অপরাধ থেকে মুক্ত হয়ে সে বুঝতে পারে ইতোপূর্বে সে যা করেছে তা ব্যক্তি, সমাজ ও দেশের জন্য ক্ষতিকর। তাহলেই অপরাধমুক্ত সমাজ গঠনে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে।
নবজাগরণ সেচ্ছাসেবী সংগঠনের আয়োজনে মাদক ও ইফটিজিং বিরোধী মতবিনিময় সভায়
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জানে আলম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গোদাগাড়ী মডেল থানার অফিসার ইন্চার্জ ( ওসি) মোঃ কামরুল ইসলাম।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার
মোঃ জানে আলম বলেন, গোদাগাড়ীতে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত এদের প্রতিহত করতে হবে।
মাদক ব্যবসায়ীর নিকট ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিবেন না, তাদের সাথে কোন সম্পর্ক রাখবেন না। তাদেরকে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা মসজিদ কমিটির প্রতিনিধি বানাবেন না, যদি বানায় তবে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছেলে মেয়েদের ভর্তি করবেন না।
আমাদের সবাইকে একসঙ্গে মাদকের বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে। তবে মাদকমুক্ত সমাজ হবে।
সভায় গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি কামরুল ইসলাম বলেন, কোন পুলিশের সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের সখ্যতা থাকে প্রমান করতে পারলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
আমরা মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান চালিয়ে আসছি এবং অভিযান চলমান থাকবে।
কোন মাদক ব্যবসায়ী, শিশু নির্যাতনসহ, অন্য কোন আপরাধ করে পার পাবে না। সুলতানগঞ্জ থেকে রাজশাহী পর্যন্ত মাদক কারবার চলে। গোদাগাড়ী মডেল থানা থেকে কোন মাদক ব্যবসায়ী ছাড় পায়নি। ইফটিজারকে গ্রেফতার করে শাস্তি দেয়া হয়েছে।
উপস্থিত ছিলেন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা সুফিয়া,
শাহ সুলতান কামিল মাদ্রাসার আরবী বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মাও. মোঃ দুরুল হোদা, মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিষ্ট মোঃ হায়দার আলী, গোদাগাড়ী প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলমগীর কবির তোতা, সি এন্ড জামে মসজিদের খতিব মাও. মীম ওবাইদুল্লাহ, সহকারী শিক্ষক ফারুক হোসেন প্রমূখ।
উপস্থিত ছিলেন, আল ইসলা ইসলামী একাডেমীর সহকারি প্রধান শিক্ষক তারেক আহম্মেদ আনীক, অফিস সহকারি হামিদ রানা, মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুর রহিম, সহকারি শিক্ষক জিয়াউর রহমান।
বক্তাগণ বলেন বিভিন্ন দপ্তরের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীরা খুবই শক্তিশালি। মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশ, বিজিপি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত সদস্যরা এখন বীর দাপটে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।