আর মাত্র একটি স্লিপার। পদ্মা রেল সেতুর পাথরবিহীন রেললাইন নির্মাণ বাকি ৭ মিটার। তবে এই অংশটুকু ঢালাই করা হয়নি একটি স্লিপারের অভাবে। সেতুর মাঝামাঝি ৫ নম্বর মুভমেন্ট জয়েন্টের একটি স্টিলের স্লিপার নিয়ে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। তবে শিগগিরই সে চ্যালেঞ্জ উতরে পদ্মা সেতুর রেল লাইনে গড়াবে ট্রেনের চাকা।
আগামী ৩০ মার্চ মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে পরীক্ষামূলক ভাঙ্গা পর্যন্ত চলবে রেল। যেখানে রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজনের অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। এরইমধ্যে পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপনের কাজের অগ্রগতি প্রায় ৯৯ শতাংশ বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
দায়িত্বরত প্রকৌশলী জুহুরুল ইসলাম জানান, চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জরুরি ভিত্তিতে বিমানে করে এই স্লিপার নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেছে। স্লিপারের ছিদ্র ডিজাইন অনুযায়ী মিলছে না। সূক্ষ্ম এই রেল লাইন নিখুঁতভাবে নির্মাণ একেবারে শেষ পর্যায়ে। কিন্তু শেষ মুভমেন্ট জয়েন্টের বিশেষ এই স্লিপারটি যথাযথ না হওয়ায় বিলম্ব করতে হচ্ছে। ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা রেল সেতুতে মোট ৮টি এমন মুভমেন্ট জয়েন্ট রয়েছে। এর ৭টি যথাযথভাবে স্থাপন হয়েছে। বাকি জয়েন্টও স্থাপন হয়েছে। তবে রেল লাইন ঢালাই করার জন্য এ স্লিপারের বিকল্প নেই।
‘মূল সেতুতে ১১ হাজার ১৪০টি স্লিপার স্থাপন হয়েছে। মুভমেন্ট জয়েন্টের স্টিলের স্লিপারগুলো ছাড়া বাকি কংক্রিটের সব স্লিপার চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফরিদপুরের ভাঙ্গা পুরনো রেল স্টেশনের পাশে ‘স্লিপার ফ্যাক্টরি’ স্থাপন করে সেখানেই তৈরি করেছে। শুধু সেতুর স্লিপারই নয়, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের ১৭২ কিলোমিটার রেল লাইন তৈরির জন্য সব স্লিপার এখানেই তৈরি করা হয়েছে। তবে বিশেষ তাপমাত্রায় মুভমেন্ট জয়েন্ট এবং স্টিলের স্লিপারগুলো চীন থেকে তৈরি করে আনা হয়
প্রকৌশলী জুহুরুল ইসলাম আরও জানান, স্লিপারটি বিমানে পৌঁছানো সাপেক্ষে ২৭ মার্চ বাকি অংশের কংক্রিটিং হওয়ার কথা রয়েছে। ৭২ ঘণ্টা কিউরিংয়ের জন্য অপেক্ষার পর ৩০ মার্চ মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে পরীক্ষামূলক রেল চলবে ভাঙ্গা পর্যন্ত। এ রেলে চড়বেন রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক-১ বিগ্রেডিয়ার সাঈদ আহমেদ বলেন, পদ্মা নদীতে সেতু নির্মাণ একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল। আবার সেই সেতুতে রেল সংযোগ করা আরেকটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। যে কোনো জিনিস তৈরির সময় যেটা টেবিলে করা হয়, সেটা যখন বাস্তবে অবগ্রাউন্ডে করা হয় তখন সেটা সে রকমভাবে হয়ে ওঠে না। সেটার জন্য আমাদের প্রথম দিকে কিছুটা সমস্যা ছিল। যেটা আমরা সংশোধন করেছি। এখানে আমরা সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করেছি। কংক্রিট আনার আগে, প্রেসিং করার সময়, পরে আমরা প্রতিটা বিষয় টেস্ট করছি, তারপর সেটা ব্যবহার করছি। পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপনের কাজের অগ্রগতি প্রায় ৯৯ শতাংশ।
মাত্র ৭ মিটার ছাড়া দুই প্রান্ত থেকে পুরো সেতুতে রেলপথ তৈরি। মজবুত এই রেল লাইন দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে পদ্মা সেতুর রেল রুটটিও। প্রস্তাবিত রুটটি পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতকে সংযুক্ত করে বেনাপোল-যশোর-নড়াইল-ভাঙ্গা-মাওয়া হয়ে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-টঙ্গী-আখাউড়া-চট্টগ্রাম-দোহাজারি-মিয়ানমারের গুনদুম সীমান্তে গিয়ে মিশবে। তাই পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চলাচলে নতুন এক অধ্যায় রচনা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। দেশের অর্থনীতিতে যুগান্তকারী অধ্যায় রচনা করবে এই নতুন রেল নেটওয়ার্ক। দক্ষিণের উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারজাতও সহজ হবে। আর এই রেল নেটওয়ার্ক পায়রা বন্দরের সঙ্গেও যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে