সোনালী রাজশাহী ডেস্ক : মৃত শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন মা।
রংপুর নগরীর জাহাজ কোম্পানী মোড়ে রাজা রামমোহন মার্কেটের সামনে। প্রচণ্ড শীতের মধ্যে পাতলা একটি কম্বল গায়ে জড়িয়ে এদিক সেদিক ঘুরছেন এক নারী। কোলে ঘুমিয়ে নবজাত সন্তান।
তাকে দেখে কৌতুহলী পথচলতি অনেকেই কোলের সন্তান সম্পর্কে জানতে চান। কিছু মানুষের ভিড়ও জমে গেছে। এরই মধ্যে ছুটে আসেন স্থানীয় কাউন্সিলর। আসে থানা পুলিশও। এমন ঠান্ডায় বাইরে অবস্থানের কারণ জানতে চাইতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই নারী।
এক পর্যায়ে জানা গেল, কোলে যে নবজাতক ঘুমিয়ে আছে, সে তারই নাড়িছেঁড়া সন্তান। তবে শিশুটি বেঁচে নেই। তা জানা সত্ত্বেও সন্তানের বেঁচে ওঠার আশায় কোলে নিয়ে দিনভর এখানে সেখানে ছুটেছেন অবুঝ এই মা। হৃদয়বিদারক এ ঘটনা স্থানীয় মানুষজনকে নাড়া দিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই নারী রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলার মধুপুর এলাকার বাসিন্দা। বিয়ে না হলেও এক অ্যাম্বুলেন্স চালকের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। গত মাসের শেষের দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ এলাকায় সন্তান জন্ম দেন তিনি।
এরপর সন্তানকে নিয়ে তার নিজ বাড়িতে চলে যান। কিন্তু সৎ বাবা তাকে মারধর করেন ও শিশুটিকে বিক্রি করে দিতে বলেন। নির্যাতন সইতে না পেরে বাড়ি ছেড়ে রংপুর শহরে চলে আসেন তিনি।
সন্তান নিয়ে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ান। যেখানে রাত হয় সেখানেই কোনোভাবে রাতযাপন করেন তিনি। এতে একপর্যায়ে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে।
গত শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে কোলের সন্তানকে নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান ওই মা। সেখানে চিকিৎসক জানান, শিশুটি মারা গেছে। কিন্তু ডাক্তারের কথা বিশ্বাস করেননি তিনি।
মৃত সন্তানকে বাঁচানোর আশায় নগরীর মাহিগঞ্জে এক কবিরাজের কাছে ছুটে যান। কিন্তু কবিরাজও অসুস্থ ও শয্যাশায়ী। সে কারণে শিশুটিকে চিকিৎসা দিতে পারেননি। কবিরাজের বাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন ওই মা এবং মাহিগঞ্জ বাজার এলাকায় দিনভর মৃত সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে থাকেন। রাতে তাকে দেখা যায় রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ ভিসা অফিসের সামনে।
এরপর বিষয়টি স্থানীয় কাউন্সিলর ও থানা পুলিশের নজরে আসে। মাহিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান জানান, স্থানীয়রা ওই নারী মানসিক ভারসাম্যহীনের মতো কথা বলছিলেন। ওই নারীর কোলে থাকা শিশুটি মৃত কিনা তা পরীক্ষার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ওইদিন সন্ধ্যায় ধাপ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মাহমুদুল হাসান বলেন, ওই নারী মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। শীতে খোলা জায়গায় রাত কাটানোর কারণে নবজাত শিশুটি মারা যায়। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তথ্য সময় নিউজ