সোনালী রাজশাহী নিউজ: বইমেলা শুরুর আগে প্রকাশকদের মনে আশঙ্কা ছিল এবার মেলায় বিক্রি কম হবে। কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ায় বইয়ের দাম বেড়েছে। এছাড়া, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় মানুষের জীবনযাপনের ব্যয় গেছে বেড়ে; কিন্তু মেলার ছয় দিন পেরিয়ে এসে প্রকাশকরা বলছেন, মেলায় বিক্রি ভালো। বই যিদি ভালো হয় সেই বই বিক্রি হবেই। লেখা ভালো না হলে মানুষ সে বই কেনে না। এবারের মেলা এটাই প্রমাণ দিচ্ছে যে, ভালো বইয়ের প্রকাশ করলে তা পাঠকের সমাদর পাবেই।
সত্যিই তাই, আগামী থেকে আনোয়ারা সৈয়দ হকের উপন্যাস ‘হে সন্তপ্ত সময়’, কথাপ্রকাশ-এর হরিশংকর জলদাসের লেখা ‘কর্ণ’, প্রথমা থেকে আকবর আলী খানের ‘মুজিবনগর সরকার ও বর্তমান বাংলাদেশ’, বাতিঘর এনেছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘স্বপ্ন ছিল থাকবেও’, মাওলা এনেছে সেলিনা হোসেনের ‘শরণার্থী সুবর্ণরেখা’, অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত সাদাত হোসাইনের ‘শঙ্খচূড়’, পাঠক সমাবেশের স্বকৃত নোমানের গল্পগ্রন্থ ‘কয়েকজন দেহ’, পাঞ্জেরীর মোজাফফর হোসেনের ‘নো ওমেনস ল্যান্ড’ এবং পিয়াস মজিদের ‘এ সকাল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়’—এসব বইয়ের বিক্রি বেশ ভালো বলেই জানালেন প্রকাশকরা।
এদিকে, বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি’র বই খুব ভালো বিক্রি হচ্ছে।
ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ-এর অন্যতম প্রকাশক আদিত্য অন্তর বললেন, ‘বইমেলা নিয়ে খুবই আশঙ্কায় ছিলাম; কিন্তু সে শংঙ্কা এই ছয় দিনের কেটে গেছে। পাঠক আসছেন, বই বিক্রি হচ্ছে। এটাই তো সার্থক মেলার পরিচয়।’
চিঠিতে শিশুচত্বরের প্রবেশের রাস্তা সংস্কার করতে বলা হয়েছে। এছাড়া, প্রথমা প্রকাশনের স্টলের সীমানা বৃদ্ধি করেছে, তা ভেঙে নির্দিষ্ট মাপে করতে বলা হয়েছে। মিজান পাবলিশার্সের প্যাভিলিয়নের উচ্চতা বেশি হয়েছে তা কমাতে বলা হয়েছে। আর আকাশ কুঁড়েঘরের মতো করে ছাদ নির্মাণ করে প্যাভিলিয়ন বানিয়েছে, তাও নীতিমালা অনুযায়ী সংস্কার করতে বলা হয়েছে।
এছাড়াও চিঠিতে টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর, টিএসসি থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মধ্যে প্রবেশমুখে, ফায়ার সার্ভিস অফিসের সামনে দিয়ে মন্দিরের গেট পর্যন্ত ওয়াশ রুমসহ এবং মাঠের চার পাশে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা এবং নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। ফুড জোনের যারা স্টল বরাদ্দ পেয়েছে, তারা তাদের নির্ধারিত স্থানের বাইরে কোনো প্রকার খাদ্যদ্রব্য রান্না, প্রদর্শন এবং রান্নার সামগ্রী রাখতে পারবেন না। স্টলের বাইরের অংশে কেবল খাবার খাওয়ার জন্য ব্যবহূত হবে। বরাদ্দপত্র ব্যতীত কোনো প্যাভিলিয়ন, স্টল, খাবারের দোকান, কিয়স্ক বা অন্যকোনো স্থাপনা বইমেলা প্রাঙ্গণে রাখতে পারবে না।
মেলায় পাঠকদের অসুবিধা প্রসঙ্গে আগামী প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী ওসমান গনি বললেন, মেলার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের গেট বন্ধ রাখা হয়। ফলে অনেক দর্শনার্থীকে ফিরে যেতে হয়েছে। কালীমন্দিরের মূল গেট বন্ধ রেখে ভেতরে প্রবেশের ব্যবস্থা রাখায় মূল গেটে জটলা বেঁধে গিয়ে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এসব সমস্যার দ্রুত সমাধান চান তিনি।
নতুন বই এসেছে ১২১টি। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—পাঠক সমাবেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে মোজাফফর হোসেনের ‘বানোয়াট জীবনের গল্পগুলো’, নাগরী এনেছে ইমতিয়ার শামীমের ‘তিনটি মেয়ে একা’, অবসর প্রকাশনা এনেছে শম্পা হাসনাইনের উপন্যাস ‘দ্বিচারক’, অনন্যা এনেছে হানিফ সংকেতের কলাম সমগ্র ‘আবেগ যখন বিবেকহীন’, শৈশব প্রকাশ এনেছে সানজিদা সামরিনের শিশুসাহিত্য ‘লাল পিঁপড়া ঙিংচিং’, ঐতিহ্য এনেছে আফসান চৌধুরীর ‘১৯৭১ অর্থনৈতিক বৈষম্য’, শ্রাবণ প্রকাশনী এনেছে ডা. মো. আখতারুজ্জামানের কাব্যগ্রন্থ ‘ফাগুনকে দেব অভিশাপ’, বিভাস এনেছে প্রদ্যোত কুমার দাসের আত্মস্মৃতি ‘জীবনের জলরঙ’।
মেলামঞ্চে অনুষ্ঠান
বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : কাজী রোজী এবং স্মরণ : দিলারা হাশেম শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাসির আহমেদ এবং তপন রায়। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আসলাম সানী, শাহেদ কায়েস, আনিসুর রহমান এবং শাহ্নাজ মুন্নী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অসীম সাহা।
অসীম সাহা বলেন, জীবনের নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে কাজী রোজী যে নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়েছেন, তাতে তিনি সফল হয়েছেন। জীবনের অন্তর্গত রহস্য ও নিম্নশ্রেণির মানুষের সংগ্রাম দিলারা হাশেমের সাহিত্যকর্মে উঠে এসেছে। আমাদের উচিত যথাসময়ে তাদের মতো গুণী মানুষের কাজের স্বীকৃতি ও সম্মান প্রদর্শন।
অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মোজাম্মেল হক নিয়োগী, রহীম শাহ, সত্যজিৎ রায় মজুমদার এবং তুষার কবির। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মাহবুব সাদিক, ফারুক মাহমুদ এবং আতাহার খান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, মাহিদুল ইসলাম এবং অনন্যা লাবনী। এছাড়া ছিল সাইমন জাকারিয়ার পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ভাবনগর ফাউন্ডেশন’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী আজগর আলীম, আবুবকর সিদ্দিক, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, রহিমা খাতুন, শান্তা সরকার।