বিজয়ের বাণী :
বীর মুক্তিযোদ্ধা
সাংবাদিক তৈয়বুর রহমান মুখে
রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈয়বুর রহমান, জন্ম ৮ ই ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪ সাল, পিতা, মৃত গিয়াস উদ্দিন আহমদ, মাতা, মৃত লালমন নেশা।
তিনি যুদ্ধ করেছেন সাত নম্বর সেক্টরের চার নম্বর সাব সেক্টরে। বর্তমানে পেশায় তিনি সাংবাদিক ও গণসংগীত শিল্পী। একাত্তরের মহান এই মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীনতার মাসে স্মরণ করেছেন রাজশাহীকে হানাদার মুক্ত করে স্বাধীনতা পাওয়ার সেই মুহূর্তের কথা
১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরাজিত হলে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক দেশটি স্থান করে নেয়। বিজয় উল্লাসে ফেটে পড়ে বাংলার মুক্তিকামী জনগণ।
বিজয়ের তিন দিন আগে ১২ থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর ও এর আশপাশ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে হানাদার বাহিনীর প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্ব দেন ৭ নম্বর সেক্টরের সাব সেক্টর ৪-এর কমান্ডার তৎকালীন মেজর গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড চাপে তারা পরাজিত হয়ে ১৫ ডিসেম্বর খুব সকালে গোদাগাড়ী হয়ে রাজশাহী অভিমুখে পালাতে থাকে। এসময় মুক্তিযোদ্ধারাও তাদের পিছু পিছু ধাওয়া করতে থাকে।
বিকেল ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে গোদাগাড়ী এসে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পরে রাজশাহী থেকে শত শত মানুষ জয় বাংলা ধ্বনি দিতে দিতে সেখানে আসলেই হাবিলদার আবুল হোসেনের নেতৃত্বে সাত জন মুক্তিযোদ্ধার একটি অ্যাডভান্স দল নিয়ে রাজশাহীতে আমরা প্রথম প্রবেশ করি। রাজশাহী নগরীতে প্রবেশ করে প্রথমেই রাজশাহী বেতার কেন্দ্রটি দখলে নেই। আমরা নগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের মালায় মালায় ভরিয়ে দেন নগরীর শত শত মানুষ। আর জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সারা শহর।
মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করেছে জানতে পেরে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে হানাদার বাহিনী রাজশাহী ছেড়ে ঢাকা মুখে দ্রুত বেগে পালিয়ে যাওয়া শুরু করে। ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জোহা হলের বন্দিদের ছেড়ে দিয়ে ঢাকা অভিমুখে পলায়ন করে পাকবাহিনী। এদিনই পাক হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে রাজশাহীর দখল নেই আমরা। হাবিলদার আবুল হোসেনের নেতৃত্বে আমরা সর্বপ্রথম নগরীতে প্রবেশ করি।
ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে চারদিকে মুক্তিযুদ্ধ তীব্রতর হয়ে ওঠে। বিজয়ের নেশায় মুক্তিযোদ্ধারা তখন দারুণ উজ্জীবিত। হানাদার বাহিনীর উপর মুহুর্মুহু আক্রমণ শুরু হয়ে গেছে । মুক্তিবাহিনীর ব্যাপক আক্রমণে পর্যুদস্ত হানাদার বাহিনী। ইতোমধ্যে বিশ্বের বড় বড় দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে শুরু করেছে। দেশের অন্যান্য সেক্টরের যুদ্ধ চলছে প্রচণ্ড। সে যুদ্ধ রাজশাহী সেক্টরেও ছড়িয়ে পড়ে।
১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর বিকেল ৩টা। ৭ নম্বর সেক্টরের সাব সেক্টর ৪-এর কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধাদের তৈরি হতে বললেন। আমাদের মহানন্দা নদী পার হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আক্রমণের নির্দেশ দিলেন। আমরাও তখন যুদ্ধের নেশায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আক্রমণের জন্য মহানন্দা নদী পার হয়ে রাজারামপুরে গিয়ে উঠলাম। সেখানে রাজারামপুর হাসিনা গার্লস স্কুলে উঠলাম। তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আমরা স্কুলে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করার পর কমান্ডার আমাদের সাবধান থাকতে বললেন। যেকোনো সময় হানাদার বাহিনী আক্রমণ করে আমাদের সবকিছুই তছনছ করে দিতে পারে। নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে সারা রাত কেটে গেল।
স্কুলের পাশে রাজারামপুর জুড়ে রয়েছে একটি বিরাট বিল। বিলে বেশ পানিও রয়েছে। বিলের উত্তরপাড়ে পাকহানাদার বাহিনীর চলাচল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাদের মোকাবিলা করার জন্য বিলের দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে ড্রেন খনন করা হলো। রাজারামপুর স্কুলের পাশ দিয়ে চলে গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরমুখে সোজা পাঁকা রাস্তা। যেকোনো সময় হানাাদার বাহিনী সে রাস্তা দিয়ে আমাদের উপর আক্রমণ করে বসতে পারে এই আশঙ্কায় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি শক্ত অবস্থান বসানো হয় সড়কের উপর। যেন হানাদার বাহিনী কোনোভাবেই আমাদের পরাভুত করতে না পারে।
১৩ ডিসেম্বর রাত ৪টার দিকে আমাদের পক্ষ থেকে হানাদার বাহিনীর অবস্থানের ওপর মর্টার আক্রমণ শুরু হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর থেকে তা থেমে গেল। সকাল ৯টার দিকে আমাদের রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধাকে হরিপুর ব্রিজ পাহারা দেওয়ার জন্য পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। সেখানে পৌঁছাতেই মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান টের পেয়ে হানাদারবাহিনীর সঙ্গে শুরু হয়ে যায় তুমুল যুদ্ধ। তারা ভারী অস্ত্র নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক এলাকা যুদ্ধ ক্ষেত্রে পরিণত হয়ে উঠে। তাদের প্রবল চাপে মুক্তিযোদ্ধারা সেখান থেকে পিছু সরে আসে। আমার কাছে দেওয়া হলো এলএমজি। আমার টুআইসি ছিলেন নুরুন্নবী নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা। হরিপুর ব্রিজের নিচে একটি বাঁশের ঝোপের আড়ালে পজিশন নিলাম। আমার ডান দিকে অবস্থান করছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী। আমরা পজিশন নিতে না নিতেই রাজশাহীর দিক থেকে হানাদার বাহিনীর একটি জিপ দ্রুত বেগে ছুটে আসছে জানতে পেরে তাদের গতিরোধ করার জন্য প্রস্তুতি নিলাম। গাড়িটি ব্রিজের ওপর আসতেই চারদিক থেকে তার ওপর গুলিবর্ষণ শুরু হয়ে গেল। একদিকে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী, আরেক দিকে আমারা। দুই পক্ষ থেকে ফায়ার চলছে। আমি এক নাগারে ৪টি এলএমজির ম্যাগজিনের গুলি শেষ করে ফেলেছি। আমাদের সঙ্গে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীও পাকবাহিনীর ওপর ফায়ার চালিয়ে যাচ্ছে।
এর মধ্যেই হানাদার বাহিনীর একটি গুলি একজন ভারতীয় বাহিনীর এক অফিসারের বুকে এসে বিদ্ধ হলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে ঘাড়ে নিয়ে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী পিছু হটলে আমরা একা হয়ে পড়ি। আমরা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা তখনও যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর পিছনে ফিরে দেখি আমার সাথী নুরুন্নবী নেই। অন্যরা সবাই সরে পড়েছে। আমি হতবিহব্বল হয়ে পড়ি। আর মনে মনে চিন্তা করি গুলি থামিয়ে দিলে হানাদার বাহিনী বুঝে নেবে যে আমাদের সবাই সরে পড়েছে। তাই ফায়ার করতে করতে বিলের কোল ঘেঁষে আমাদের ডিফেন্সের দিকে দৌড় দিলাম। এতে হাপিয়ে গিয়েও স্বস্তি পেলাম না। হয়তো হানাদান বাহিনী আমাকে ধরে ফেলবে। এবার বিলের মধ্যে একটি সরু রাস্তা দিয়ে দিলাম দৌড়, একেবারে মোরচায় লাফ দিলাম। আর তেমনি হানাদার বাহিনীর মর্টারের গোলা এসে পড়লো সেখানে। আমিও অল্পের জন্য বেঁচে গেলাম।
আমরা সেখান থেকে উইথড্র করার পর রাজারামপুর হাসিনা বালিকা বিদ্যালয়ের চারদিকে মোর্চা ও প্রতিরক্ষাব্যুহকে আরও শক্তিশালী করা হলো। স্কুলের পিছনের রাস্তার ওপর বসানো হলো হেভি মেশিনগান (এমএমজি), দুই ধারে দুটি করে বসানো হলো ৪টি লাইট অর্থাৎ মেশিনগান(এলএমজি), এর সঙ্গে রইল এসএল আর, থ্রিনট থ্রি।
সেদিন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই দেখি হানাদার বাহিনীর কয়েকটি জিপ ফায়ার করতে আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে। আমাদের রেঞ্জের মধ্যে আসতেই কমান্ডার ফায়ার বলার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো বৃষ্টির মতো গোলাগুলি। আধা ঘণ্টা ধরে গোলাগুলি চলে। আমাদের গোলার আঘাতে হানাদার বাহিনীর জিপ নিমিষেই উল্টে গেল, আবার কোনোটি ধ্বংস হয়ে গেল। আর আমাদের আক্রমণে হানাদার বাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে ইয়া আলী ইয়া আলী বলতে বলতে পিছু হটতে বাধ্য হয়। আমরা শহরের বটতলি হাট পর্যন্ত তাদের ধাওয়া করে আগাতে থাকলাম। সেখানে সারারাত তাদের সঙ্গে যুদ্ধ চলে।
১৪ ডিসেম্বর। সকাল হতেই মেজর গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী আমাদের সামনে আগানোর হুকুম দিলেন। হানাদার বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি উড়িয়ে দিতে হবে। এ উদ্দেশ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিডি হলের সামনে গিয়ে অবস্থান নিলাম। আমাদের পাশে আওয়ামী লীগের এক নেতার বাড়িতে বসানো হলো এমএমজি। সেখান থেকে হানাদার বাহিনীর ওপর শুরু হলো ফায়ার। আমাদের মুহুর্মুহু আক্রমণে তারা হতভম্ব ও নিরুপায় হয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে লাগল। আমাদের ওপর তারা মর্টার ও ভারী অস্ত্র নিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালায়। কিছুক্ষণের মধ্যে আমার পিঠের ওপর দিয়ে তাদের আর আর গানের গোলা বেরিয়ে গেল দ্রুত বেগে। পুরো দিন ধরে চলে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ। দুপুর হলে কিছুক্ষণ পরে একটু পিছিয়ে আসতে দেখা হলো আমাদের সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে। তার সামনাসামনি হতেই উভয়ের মধ্যে এসে পড়লো এলএমজির গুলির অগ্রের অংশটি। আমাকে দেখেই তিনি বললেন, তৈয়বুর আমরা কি কাউন্টার এটাকে পড়ে গেলাম নাকি। দেখো তো এটা কি চায়না রাইফেলের গুলির অংশ? পরক্ষণে ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনী থেকে ওয়ারলেসে খবর দেওয়া হলো ভুলবশত গুলিটি ছোড়া হয়েছে। বুঝতে অসুবিধা হলো না যে, ভারতীয় সেনাবাহিনী আমাদের ওভার সার্পোট দেওয়ার জন্য পাকবাহিনীর উপর মর্টার শেলিং ও গুলি চালিয়েছে।
খবর পেলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জের পশ্চিম রণাঙ্গণে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে একের পর এক লাগাতার আক্রমণ চলছে পাকহানাদার বাহিনীর উপর। এতে তারা লণ্ডভণ্ড হবার উপক্রম। হানাদারবাহিনী এদিক সেদিক ছুটাছুটি করছে। সিদ্ধান্ত ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জকে চারদিক থেকে ঘেরাও করে নবাবগঞ্জ শহরেই তাদের আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হবে। ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে যখন পশ্চিম রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে চলেছে ঠিক তখনই হঠাৎ খবর এলো চাঁপাইনবাবগঞ্জের রেহাইচরে ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। আমাদের মনোবল ভেঙে পড়ল। পরক্ষণে আমাদের মাথার ওপর দিয়ে প্রচণ্ড বেগে মর্টারের গোলা এসে পড়লো সেখানে। এতেই আমাদের মর্টার প্লাটুনের দুইজন মারা যান আর দুইজন আহত হন। সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেল আমাদের মর্টার আক্রমণ। জানতে পারলাম শত্রুপক্ষের মর্টার আক্রমণে আমাদের মর্টার প্লাটনের সারওয়ার ও আমিনুল নামের দুইজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হয়েছেন। আর আহত হন আব্দুস সাত্তার, আলফাজ ও নূরতাজ নামের তিনজন মুক্তিযোদ্ধা।
রাত শেষ যখন সকাল হয়ে গেছে। ১৫ ডিসেম্বরের শুরু হতেই আমরা পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ খবর এলো হানাদার বাহিনীর রাজশাহী অভিমুখে পালিয়ে যাচ্ছে। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরাও তাদের পিছু ধাওয়া করলাম। বেলা যখন ১২টা, তখন আমরা গোদাগাড়ীর মহিশালবাড়ী নামক স্থানে পৌঁছালাম। ২৬ মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণার পর মহিশালবাড়ীর যেখান থেকে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আমরা লড়াই শুরু করেছিলাম সেখানেই এসে আবার ডিফেন্স স্থাপন করা হলো। আমার বাড়ি সেখানে হওয়ায় আমার আত্মীয়-স্বজনরা আমাকে দেখতে ছুটে আসেন। কিন্তু আমার মা-বাবাকে না পেয়ে খোজাখুঁজি শুরু করে দিলাম। হঠাৎ আমার মা আমাকে পেয়ে মহা খুশি। আমাকে পেয়ে মা বললেন, বাবা খুবই খুশি। আর অন্যরা আমাকে পেয়ে কোলে নিয়ে নাচানাচি শুরু করে দিলেন। আমার কমান্ডার আমাকে আবার প্রস্তুত হতে বললেন। তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। রাজাকাররা চারদিক থেকে আত্মসমর্পণ করছে। আর রাজশাহীর দিক থেকে দলে দলে গাড়ি যোগে জয়বাংলা ধ্বনি দিচ্ছে আর আমাদের রাজশাহী যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।
সন্ধ্যা নেমে আসার আগেই হাবিলদার আবুলের নেতৃত্বে তিনজন সাবেক ইপিআর সদস্যসহ আমি নিজে এবং গোদাগাড়ী থানার পিরিজপুরের হারুনুর রশিদকে নিয়ে রাজশাহী অভিমুখে যাত্রা শুরু করলাম। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার মধ্যে প্রথম দখলে নিলাম রাজশাহী বেতার কেন্দ্র। আমরা সেখান থেকে প্রথম রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী রেল স্টেশনে ডিউটি পালন করছি ঠিক সেসময় শিরইল কলোনি থেকে গুলির আওয়াজ আসায় আমরা সেদিকে পাল্টা কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়লাম। এরপর অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে আসলে সকালে আমরা বোয়ালিয়া ক্লাবে গিয়ে জমা হলাম। এরপর হানাদারমুক্ত হয়। সবাই ফিরে আসে তাদের শহরে। বন্দিদশা থেকেও অনেকে বেঁচে ফিরে আসে। দীর্ঘ নয়মাস যুদ্ধ শেষে বিজয় পেলাম। পেলাম এক নতুন দেশ।