রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সদ্য যোগদানকৃত পুলিশ কমিশনার মো: আনিসুর রহমান, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
২৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাত ৭.৩০ টায় আরএমপি সদরদপ্তরে সাংবাদিকবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এসময় সাংবাদিকবৃন্দ পুলিশ কমিশনারকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
মতবিনিময় সভায় পুলিশ কমিশনার বলেন, বিজয়ের এই মাসে বক্তব্যের শুরুতেই আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, ১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্ট শাহাদতবরণকারী বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল সদস্যকে। সেই সাথে আরও স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহিদ জাতীয় চার নেতা। বিনম্র চিত্তে শ্রদ্ধা জানাই মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভে শাহাদাত বরণকারী তৎকালীন রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি শহিদ মামুন মাহমুদ ও রাজশাহীর পুলিশ সুপার শাহ্ আব্দুল মজিদ-কে যাঁদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে রাজশাহী অঞ্চলে পুলিশ সদস্যবৃন্দ দেশ মাতৃকার স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে জীবন উৎসর্গ করে তৈরি করেছিলেন বীরত্বগাথা আখ্যান।
তিনি আরও বলেন, আজকের পরিচিতি সভায় আপনারা আমার ডাকে সাড়া দিয়েছেন। আমরা জানি যে, মিডিয়া হচ্ছে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। মিডিয়ার বদৌলতে আমরা ঘটে যাওয়া পৃথিবীর অনেক বিষয় অবহিত হতে পারি। একটি ঘটনাকে হৃদয়গ্রাহী করে আপনারা অত্যন্ত পরিশীলিতভাবে উপস্থাপন করেন। আপনারা শুধু পেশার কারণেই কাজ করেন না, আপনাদের রয়েছে সামাজিক দায়বদ্ধতা। সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে আপনারা জাতির বিবেক হিসেবে সুউচ্চ মর্যদায় অধিষ্ঠিত।
আপনারা জানেন, পুলিশ জনগণের সেবক। বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক চেতনা বাস্তবায়ন ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে আএমপি’র পুলিশ কাজ করে যাবে। জনগণের জান-মাল রক্ষা, জননিরাপত্তা প্রতিবিধান, মামলা তদন্ত এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ করাই পুলিশের প্রধানতম দায়িত্ব। এই দায়িত্বের পাশাপাশি রাজশাহী মহানগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণে আরএমপি’র পুলিশ আপনাদের পাশে আছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যে-কোনো ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও সনাক্তকরণের লক্ষ্যে আরএমপি’র পুলিশ সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব প্রদর্শন করবে। পুলিশের কার্যক্রমকে বেগবান করতে গোয়েন্দা নজরদারি আরও বৃদ্ধি করা হবে।
রাজশাহী মহানগর ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখানে মাদকের প্রাদুর্ভাব রয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাদকের বিরুদ্ধে ঘোষিত জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে আরএমপি সর্বোচ্চ গুরুত্বদিয়ে কাজ করবে। সন্ত্রাসবাদ দমনের লক্ষ্যে আরএমপি’র সিআরটি এবং বোম্ব ডিসপোজাল টিমকে আধুনিক প্রশিক্ষণ ও উন্নত সরঞ্জামে আরও শক্তিশালী করা হবে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে আমি কমিউনিটি এবং বিট পুলিশিংয়ের কার্যক্রমকে জোরদার ও গতিশীল করতে চাই।
আমরা পুলিশি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। পুলিশ যাতে জনগণকে হয়রানী করতে না পারে সে-দিকে লক্ষ্য রাখা হবে। তা ছাড়া পুলিশ সদস্য কর্তৃক যে-কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট, অপারেশন কন্ট্রোল অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টার, ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের কার্যক্রমকে আমি আরও জোরদার করতে চাই। তা ছাড়া কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে আরএমপি’র অভিযান অব্যাহত থাকবে। পুলিশি দায়িত্বের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমি নানা ধরনের মানবিক কর্মকান্ডও অব্যাহত রাখবো। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে আজ আমার যাত্রা শুরু হলো। এটাই আপনাদের সাথে আমার প্রথম সাক্ষাত। আপনারা ইতিপূর্বে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন পুলিশি সাফল্য কভার করেছেন। আপনারা পূর্বে যেভাবে সহযোগিতা করেছেন, আগামী দিনগুলোতে একইভাবে সেই ধারা অব্যাহত রাখবেন।
অনুষ্ঠানে পুলিশ কমিশনারের যোগদানের পর সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভার আয়োজন করায় সাংবাদিকবৃন্দ পুলিশ কমিশনারের প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানান। রাজশাহী নগরীকে নিরাপদ নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে পুলিশ কমিশনারের পাশে থাকার কথাও ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন অ্যান্ড ফিন্যান্স) মো: ফারুক হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) বিজয় বসাক, বিপিএম, পিপিএম (বার), অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক অ্যান্ড ডিবি) জনাব সামসুন নাহার, বিপিএম-সহ আরএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ-সহ রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সেক্রেটারী, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ব্যুরো চিফ ও রিপোর্টারবৃন্দ, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ক্যামেরা পার্সোনেল, প্রিন্ট মিডিয়ার ক্যামেরা পারসন, অনলাইন টিভি এবং অনলাইন নিউজ পোর্টালের সাংবাদিকবৃন্দ।