সোনালী রাজশাহী ডেস্ক : পৃথিবীতে যত লোক ন্যাচারাল ড্রাগস খেয়ে মারা গেছেন, তার এক হাজার গুণ বেশি লোক মারা যাচ্ছে সিনথেটিক ড্রাগস খেয়ে। এ ড্রাগসের ক্ষতিকর বিষয়টি হচ্ছে, তার পরিণাম অবধারিত মৃত্যু। সিনথেটিক ড্রাগস দেশে নিয়ে আসার পেছনে রয়েছে উচ্চশ্রেণির সন্তানরা। এমনটি জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রধান রসায়নবিদ ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রধান রসায়নবিদ ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেছেন সিনথেটিক ড্রাগসে ঝুঁকছে ’উচ্চবিত্ত শ্রেণির’ সন্তানরা, ক্ষতিকর বিষয়টি হলো অবধারিত মৃত্যু।
আইস, এলএসডি, ডিওবি কিংবা কেটামিনের মতো সিনথেটিক ড্রাগসে ঝুঁকছে সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণির’ সন্তানরা। এসব মাদকসেবনের পাশাপাশি তারা জড়িয়ে পড়ছে কারবারেও। সরবরাহ করা হচ্ছে রাজধানীর অভিজাত এলাকার বিভিন্ন পার্টিতে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বলছে, এসব তরুণদের অধিকাংশই উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গিয়ে রপ্ত করেছেন মাদক তৈরির ফর্মুলা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর জানায়, রামিছা শিমরান। অভিজাত এলাকার মাদকসেবী ও এই কারবারে জড়িত ব্যক্তিরা তাকে চেনেন ইডেন ডি সিলভা নামে। সম্প্রতি গ্রেফতার হয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অভিযানে। তার বাবা একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। ভারতে পড়াশোনা করতে গিয়ে শেষ না করেই দেশে ফিরে আসেন। জড়িয়ে পড়েন মাদকচক্রে।
রাজধানীর বিভিন্ন পার্টিতে মাদক সরবরাহ করতে গিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের সহযোগী ভাইস্তা রাসেলের সঙ্গে পরিচয় হয় এ ইডেন ডি সিলভার। রাসেল এবং তার স্ত্রী রাজধানীর গুলশান, বনানী এলাকায় আইস সরবরাহকারী বলে জানা গেছে।
রুবায়েত আলী নামে এক তরুণ, উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর পড়ালেখার জন্য গিয়েছিলেন যুক্তরাজ্যে। ২০১১ সালে দেশে ফিরে জড়িয়ে পড়েন মাদক কারবারে। আইস, ইয়াবাসহ বিভিন্ন অপ্রচলিত মাদক সরবরাহের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছরের আগস্টে তাকে গ্রেফতার করে ডিএনসি। এর পর আবার ৮ ডিসেম্বর গ্রেফতার করা হয় দ্বিতীয়বারের মতো। মুহাইমিনুল ইসলাম ইভানও এই চক্রের আরেক সদস্য। গ্রেফতার হয় আগস্টে।
গত বছরের ৭ থেকে ৯ ডিসেম্বর ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কয়েকদফা অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর গ্রেফতার করে ছয় জনকে। এর আগে আরও দুজনকে। এই আটজনের সবাই বয়সে তরুণ। সবাই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান বলে জানান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারি পরিচালক (ঢাকা মেট্রো উত্তর) মেহেদী হাসান।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেশের অভিজাত এলাকায় সিনথেটিক ড্রাগস বা এ ধরনের মাদকের চাহিদা বেশি হচ্ছে। গত বছর আগস্টে আমরা বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছি। ১০ থেকে ১২ জনের একটি দলকে আইস মাদকসহ গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই উচ্চবিত্ত ঘরের সন্তান। তাদের বাসা গুলশান, বানানী ও ধানমন্ডিতে। বেশ কয়েকজন আবার বিদেশেও পড়তে গিয়েছিলেন, বিভিন্ন সময় তারা বিদেশে ভ্রমণও করেছেন। তার স্বীকার করেছেন বিদেশে অবস্থানকালে তারা এ ধরনের মাদক সম্পর্কে জানতে পেরেছে ও খেয়েছেন এবং দেশে এসে বিক্রির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। যখনই এ ধরনের কাউকে গ্রেফতার করা হয়, তখনই আমাদের টার্গেট থাকে এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে ধরা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রধান রসায়নবিদ ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ধনাঢ্য পরিবারের এসব সন্তানরা মাদকসেবন ও ব্যবসায়ের চক্র তৈরি করেছেন। এটি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে একসময় এ কাতারে শামিল হবে সব শ্রেণির মাদকসেবীরা।
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীতে যত লোক ন্যাচারাল ড্রাগস খেয়ে মারা গেছেন, তার এক হাজার গুণ বেশি লোক হচ্ছে সিনথেটিক ড্রাগস খেয়ে মারা গেছেন। যেহেতু এই সিনথেটিক ড্রাগসটি অনেক দামি, তারা তখন ছোট ছোট ব্যবসায়ী হয়ে যান। ১০ জনের কাছে বিক্রি করলে, ২ জনের লাভ হলে, এভাবে তারা খাওয়া শুরু করেন। সিনথেটিক ড্রাগসের ক্ষতিকর বিষয়টি হচ্ছে, এর পরিণাম অবধারিত মৃত্যু। যারা বর্তমান সিনথেটিক ড্রাগস ব্যবহার করছেন।
তিনি আরও বলেন, ধনাঢ্য ঘরের সন্তানরা এটার (দামি মাদক) সোর্স। কারণ ইউরোপ-আমেরিকা যাওয়া-আসা তাদের জন্য ব্যাপার না। তারা সহজে সেখানে যেতে আসতে পারছেন সে সবের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে এবং দেশে নিয়ে আসছেন। আরেকটি মাদক দেশের আসার সম্ভবনা রয়েছে, সেটি হচ্ছে গামা হাইড্রক্সি বিউটারিক অ্যাসিড, এটাও আসবে, ইউরোপ-আমেরিকাতে এটি ব্যবহার হচ্ছে। বাংলাদেশে যে আসবে না, এমনটা বলা যায় না। কারণ যখন ম্যাজিক মাশরুম পশ্চিমবঙ্গের দমদম এয়ারপোর্টে ধরা পড়েছিল বিগত ৫ বছর আগে, তখন কিন্তু আমি বলেছিলাম, আমরা কিন্তু এর বাইরে না। তার এক মাস যেতে না যেতেই দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে এ মাদকচক্রটি।
দেশে ২০২১ সালের অক্টোবরে প্রথমবারের মতো ডিওবি নামে একটি নতুন মাদকের চালান ধরা পড়ে খুলনায় যা বিটকয়েনের মাধ্যমে ডার্ক ওয়েবে পোল্যান্ড থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল।