অনুষ্ঠানে হেইফার ইন্টারন্যাশনাল সিইও বাংলাদেশে নারী ক্ষুদ্র কৃষকদের ক্ষমতায়নের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বাংলাদেশে একটি কর্ম সফরে, হেইফার ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট এবং সিইও সুরিতা সন্দোশম ক্ষুদ্র মালিকানা প্রোজেক্টের মহিলা কৃষকদের উৎপাদন, গৃহস্থালীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং আয়ের উন্নতির জন্য হেইফার ইন্টারন্যাশনালের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তার সফরের সময়, স্যান্ডোশাম হেইফার-সমর্থিত মহিলা কৃষক এবং কৃষক-উৎপাদক সংস্থাগুলির সাথে দেখা করেছেন, যারা খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করতে এবং এই অঞ্চলের কৃষিখাত রূপান্তর করতে কাজ করছেন।
রাজশাহীর গ্রামীণ অঞ্চল পরিদর্শনের পর সন্দোশাম বলেন, “সমগ্র বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে বাংলাদেশে, নারী কৃষকরা আর্থ-সামাজিক ক্ষমতায়ন এবং টেকসই আয় অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, ইনপুট এবং বাজারে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বাধার সম্মুখীন হয়ে থাকেন- এ কারণেই হেইফার ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নারী কৃষকদের সমৃদ্ধশালী জীবিকা নির্মাণের জন্য কৃষিকে কাজে লাগাতে সহায়তা করতে সম্পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করার এই প্রচেষ্টা তাদের পূর্ণ অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া সম্ভব নয়।”
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, হেইফার ইন্টারন্যাশনাল ২০০৬ সালে বাংলাদেশে কাজ শুরু করে। সরকার এবং স্থানীয় এনজিও অংশীদারদের সাথে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। এখন পর্যন্ত, হেইফার বাংলাদেশ ৩৯ হাজার ৭৫০টিরও বেশি খামারী পরিবারকে গরু মোটাতাজাকরণ, দুগ্ধ খামার এবং ছাগল উৎপাদন এর মাধ্যমে ভ্যালু চেইনে তাদের উৎপাদন উন্নত করতে সহায়তা করেছে। হেইফার দ্বারা প্রদত্ত মহিলা কৃষকদের প্রশিক্ষণগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য কৃষকদের দুর্বলতা কমাতে খরা-প্রতিরোধী বীজ এবং সমন্বিত কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনার ব্যবহারসহ বুদ্ধিদীপ্ত জলবায়ু কৃষি অনুশীলনের উপর গুরুত্ব দেয়।
এশিয়া প্রোগ্রামের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মহেন্দ্র লোহানী বলেছেন “নারী কৃষকরা বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতি এবং টেকসই উন্নয়নের চাবিকাঠি”। সন্দোশমের সফরকালীন সময়ে অনুষ্ঠিত, অভ্যান্তরিন এশিয়া স্ট্র্যাটেজি কনফারেন্সের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের উপর আলোচনা করা হয়- “হেইফার তাদের অনন্য চ্যালেঞ্জগুলি আরও ভালভাবে বুঝতে এবং কৌশলগত কৃষি-বাস্তবতাত্ত্বিক অনুশীলনগুলি বাস্তবায়নের জন্য ছোট আকারের মহিলা কৃষকদের সাথে আরও অভেদ্যভাবে কাজ চালিয়ে যাবে; আমাদের লক্ষ্য হল নারী কৃষকদের সাহায্য করা যাতে তারা নিজেদের, তাদের পরিবার, পরিবেশ এবং একে অপরকে সাহায্য করতে পারে।”
সন্দোশমের প্রতিশ্রুতিটি এসেছে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ঠিক প্রাক্কালে, যা নারীর সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক অর্জনের একটি বিশ্বব্যাপী উদযাপন। বাংলাদেশের পাশাপাশি, হেইফার ইন্টারন্যাশনাল এশিয়া, আফ্রিকা এবং আমেরিকাসহ অন্যান্য এলাকায় নারী কৃষকদের সাথে দারিদ্র্য কমাতে, টেকসই কৃষিকে জীবিকায় উন্নীত করতে এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা দূর করতে কাজ করে। কৌশলগত পাবলিক-প্রাইভেট এবং উৎপাদন অংশীদারিত্বের মাধ্যমে, হেইফারের লক্ষ্য ১০ মিলিয়ন কৃষককে ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনা এবং একটি টেকসই আয়যুক্ত জীবনের দিকে নিয়ে যাওয়া।
জানা যায়, হেইফার ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারীতে বাংলাদেশের কান্ট্রি প্রোগ্রামের যাত্রা শুরু করে। বাংলাদেশ সরকার (জিওবি), স্থানীয় এনজিও অংশীদার, বেসরকারি খাত এবং সুশীল সমাজ সংস্থার (সিএসও) সহযোগিতায় হেইফার তার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। হেইফার ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করে, বিশেষভাবে নারী ক্ষুদ্র কৃষকদের সাথে, সামাজিক পুঁজি, প্রযুক্তিগত, এবং আর্থিক সক্ষমতা তৈরি করে, সিএসএ অনুশীলন গ্রহণ করে, আনুষ্ঠানিক বাজার তদারক করে এবং স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে, এইভাবে, উৎপাদন বৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা, গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস এবং টেকসই আয়ের মাধ্যমমে জীবিকা অর্জনে সাহায্য করতে কাজ করে।
১৯৪৪ সাল থেকে, হেইফার ইন্টারন্যাশনাল টেকসইভাবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের অবসান ঘটাতে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪৩ মিলিয়ন মানুষের সাথে কাজ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ আফ্রিকা, এশিয়া এবং আমেরিকার গ্রামীণ সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করে, হেইফার ইন্টারন্যাশনাল স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং নিরাপদ জীবিকা নির্মাণ করতে কৃষক এবং স্থানীয় খাদ্য উৎপাদনকারীদের সহায়তা করে যা একটি বাস্তবসম্মত আয় প্রদান করে আসছে।