ঢাকা , শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
গোদাগাড়ীতে ১৫০ গ্রাম হিরোইনসহ একজন গ্রেফতার বর্তমান সমাজে মারাত্মক এক ব্যাধির নাম ইভটিজিং বরিশাল ও খুলনা দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে  বিজয় নৌকার প্রার্থী খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু রাজশাহী শ্রীরামপুরে পদ্মা নদীতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হওয়া দুই কলেজছাত্রের লাশ উদ্ধার অসহায় বৃদ্ধা আলেয়া পেলেন চোখ অপারেশনের টাকা তীব্র তাপপ্রবাহের পর গোদাগাড়ীতে দেখা মিললো সস্তির বৃষ্টি প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী বনানী ঘোষ মারা গেছেন দেড় কোটি টাকা মূল্যের ১৫টি স্বর্ণের বারসহ এক যুবক গ্রেপ্তার নির্বাচনে অনিয়ম ও প্রভাব সৃষ্টি করলে ভোট বন্ধ করতে বাধ্য হবে: সিইসি

গোদাগাড়ীর পদ্মা পাড়ে গড়ে উঠা মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি

  • আরিফ হোসেন
  • আপডেট সময় ১১:৪৫:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ মে ২০২৩
  • ১১০ বার পড়া হয়েছে

আরিফ হোসেন : মৃৎশিল্প বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শিল্প।  মৃৎশিল্পের শিকড় ছিল উপমহাদেশে এবং বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম ছিল না। যদিও বাংলাদেশ প্রধানত একটি মুসলিম দেশ, মৃৎশিল্প প্রধানত একটি হিন্দু কারুশিল্প। প্রতিসাম্য, মসৃণ, উজ্জ্বল এবং   পড়ে গিয়ে না ভাঙলে এটি দীর্ঘকাল স্থায়ী হবে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি মৃৎপাত্রের জিনিসগুলিকে খুব জনপ্রিয় করে তুলেছিল।

রাজশাহী গোদাগাড়ীর ২৫ টি মৃৎ পল্লীর মাঝে  মাটিকাটা ইউনিয়নের প্রেমতুলী গ্রাম সবথেকে  নামকরা। বংশানুক্রম পেশা হওয়াই কুমার পরিবারে মৃৎপাত্র তৈরীর কায়দা-কৌশল সন্তানরা সাধারণত শিখে তাদের পরিবারের কাছ থেকে।

 প্রেমতলি কুমার পাড়ার মৃৎশিল্পের কারিগরবিনয় কুমার পাল ও তার স্ত্রী শিল্পী রানি পাল তারা দুজনেই  মৃৎশিল্পের নিপুণ কারিগর। বিনয় কুমার পাল বলেন মৃৎশিল্প হচ্ছে   আমাদের        বংশানুক্রম পেশা আমরা এই   শিল্পের কাজ আমাদের পিতামাতার কাছ  থেকে শিখেছি। এই শিল্পের সাথে  মিশে       আছে আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। আমরা এই  মাটির কাজকে কর্ম বলে মনে করিনা  এটা আমাদের উত্তরাধিকারীর ঐতিহ্য-                সংস্কৃতি  ও সৌন্দর্যের  প্রতিক এই শিল্প ।

মৃৎশিল্পে মিশে আছে  আবহমান কালের ইতিহাস-ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও সৌন্দর্য বোধ গোদাগাড়ী কুমাররা মাটির কাজ কে শুধু পেশা বলে গণ্য করে না তারা মনে করে শিল্প।  ঐতিহ্যবাহী মাটির কাজের উত্তরাধিকারী ওরা তাই বয়ে চলছে বংশপরম্পরায় শিল্প সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে। সহজ সরল স্বভাবের গোদাগাড়ী প্রেমতুলীর কুমাররা আসলে যে শিল্পী মনা সেটা বোঝা যায় তাদের  নকশা আঁকা মাটির তৈরি জিনিসপত্র দেখে মৃৎ শিল্প  মানেই মাটি দিয়ে তৈরি সুন্দর সৃষ্টিশীল বস্তু।

মৃৎশিল্প মানুষের প্রাচীনতম আবিষ্কার। খ্রিস্টপূর্ব ২৯০০০ থেকে ২৫০০০ অব্দের নব্য প্রস্তর যুগে চীনে এর সূচনা হয়েছিল । ইতিহাস অনুযায়ী চীনের বিখ্যাত শহর থাংশানে এ মৃৎশিল্পের জন্ম হয়েছিল। আর এই কারনেই চিনের এ শহরটিকে মৃৎশিল্পের শহর বলা হয়। নব্য প্রস্ত যুগে চেক প্রজাতন্ত্রে গ্রাভেতিয়ান সভ্যতার ডলনে ভোসনিসে, জাপানের জোমোন  খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০০, রাশিয়ার সর্ব পূর্বে খ্রিস্টপূর্ব ১৪০০০  সাব-সাহারান দক্ষিণ আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকায় এর আবিষ্কারের তথ্য পাওয়া যায় । বাংলাদেশ রূপ-বৈচিত্র্যের দেশ এদেশে অতীতকাল থেকে হাজার ধরনের সংস্কৃতি পালন করা হয় যার একটি নিদর্শন হল মৃৎশিল্প। রাজশাহী গোদাগাড়ী প্রেমতুলির মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য রয়েছে। গোদাগাড়ীর কুমাররা অসম্ভব শৈল্পিক দক্ষতা ও মনের মধ্যে লুকায়িত মাধুর্য দিয়ে চোখ ধাঁধানো সব কাজ করে থাকেন এই শিল্পটি হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন অন্যতম একটি শিল্প যা বাংলাদেশের ঐতিহ্য বহন করে। বৈশাখী মেলা বাংলাদেশের অন্যতম সামাজিক উৎসব বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্য বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এই মেলা বসে বৈশাখী মেলায় অনেক কিছু পাওয়া যায়।

 গোদাগাড়ীর কুমাররা নিপূনভাবে তৈরি করে মাটির তৈরি নানা জিনিসপত্র যেমন  মাটির পুতুল, মাটির হাড়ি, মাটির ফল,কলস,সরা, মাটির তৈরি বাসন, পেয়ালা,সরাই মটকা  ইত্যাদি। প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের এই বাংলাদেশে মৃৎশিল্পচর্চা হয়ে আসছে প্রাচীন মৃৎশিল্পের মধ্যে অন্যতম হলো টেরাকোটা নকশা করা মাটির ফলক বা জিনিস ইটের মতো পুড়িয়ে তৈরি করা হতো টেরাকোটা। বাংলাদেশের প্রাচীন  শিল্পকলার পরিচয় পাওয়া যায় মাটির শিল্পে । এটা এ দেশের নিজস্ব শিল্প। হাজার হাজার বছর ধরে এদেশে মাটির শিল্পের চর্চা হয়ে আসছে এদেশের মানুষের মন যে শিল্পীর মন  মাটির তৈরি নানা রংয়ের শিল্পকর্ম তা প্রমাণ করে।

কালের বিবর্তন ও প্লাস্টিক পণ্যের সহজলভ্যতার কারণে এ শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। হারিয়ে যাচ্ছে  মৃৎ শিল্পের ঐতিহ্য। প্রকৃতিতে ছোঁয়া লেগেছে আধুনিকতার ক্রমেই মানুষ মৃৎশিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ফলে মৃৎশিল্পীরা কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন বাজারে মূল্য হ্রাস আয়-ব্যয়ের সংগতি না থাকায় অনেকেই মৃৎশিল্প ছেরে ছুটছেন অন্য পেশায়। তবে যুগের সাথে মানুষের চাহিদার তালিকায় মৃৎশিল্প দখল করতে শুরু করেছে । আধুনিকতার ছোঁয়া খুঁজতে অনেকে মৃৎশিল্প দিয়ে নিজের ঘর সাজাতে চান তাই এই ধরনের পণ্যের চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। বাঙালির ঐতিহ্য এ শিল্পের সাথে মিশে আছে।

মৃতশিল্প আমাদের বাংলার গর্ব, বাংলার ঐতিহ্য।

আমরা সবাই আমাদের এই প্রাচীন শিল্পকে টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করবো।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

গোদাগাড়ীতে ১৫০ গ্রাম হিরোইনসহ একজন গ্রেফতার

গোদাগাড়ীর পদ্মা পাড়ে গড়ে উঠা মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি

আপডেট সময় ১১:৪৫:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ মে ২০২৩

আরিফ হোসেন : মৃৎশিল্প বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শিল্প।  মৃৎশিল্পের শিকড় ছিল উপমহাদেশে এবং বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম ছিল না। যদিও বাংলাদেশ প্রধানত একটি মুসলিম দেশ, মৃৎশিল্প প্রধানত একটি হিন্দু কারুশিল্প। প্রতিসাম্য, মসৃণ, উজ্জ্বল এবং   পড়ে গিয়ে না ভাঙলে এটি দীর্ঘকাল স্থায়ী হবে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি মৃৎপাত্রের জিনিসগুলিকে খুব জনপ্রিয় করে তুলেছিল।

রাজশাহী গোদাগাড়ীর ২৫ টি মৃৎ পল্লীর মাঝে  মাটিকাটা ইউনিয়নের প্রেমতুলী গ্রাম সবথেকে  নামকরা। বংশানুক্রম পেশা হওয়াই কুমার পরিবারে মৃৎপাত্র তৈরীর কায়দা-কৌশল সন্তানরা সাধারণত শিখে তাদের পরিবারের কাছ থেকে।

 প্রেমতলি কুমার পাড়ার মৃৎশিল্পের কারিগরবিনয় কুমার পাল ও তার স্ত্রী শিল্পী রানি পাল তারা দুজনেই  মৃৎশিল্পের নিপুণ কারিগর। বিনয় কুমার পাল বলেন মৃৎশিল্প হচ্ছে   আমাদের        বংশানুক্রম পেশা আমরা এই   শিল্পের কাজ আমাদের পিতামাতার কাছ  থেকে শিখেছি। এই শিল্পের সাথে  মিশে       আছে আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। আমরা এই  মাটির কাজকে কর্ম বলে মনে করিনা  এটা আমাদের উত্তরাধিকারীর ঐতিহ্য-                সংস্কৃতি  ও সৌন্দর্যের  প্রতিক এই শিল্প ।

মৃৎশিল্পে মিশে আছে  আবহমান কালের ইতিহাস-ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও সৌন্দর্য বোধ গোদাগাড়ী কুমাররা মাটির কাজ কে শুধু পেশা বলে গণ্য করে না তারা মনে করে শিল্প।  ঐতিহ্যবাহী মাটির কাজের উত্তরাধিকারী ওরা তাই বয়ে চলছে বংশপরম্পরায় শিল্প সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে। সহজ সরল স্বভাবের গোদাগাড়ী প্রেমতুলীর কুমাররা আসলে যে শিল্পী মনা সেটা বোঝা যায় তাদের  নকশা আঁকা মাটির তৈরি জিনিসপত্র দেখে মৃৎ শিল্প  মানেই মাটি দিয়ে তৈরি সুন্দর সৃষ্টিশীল বস্তু।

মৃৎশিল্প মানুষের প্রাচীনতম আবিষ্কার। খ্রিস্টপূর্ব ২৯০০০ থেকে ২৫০০০ অব্দের নব্য প্রস্তর যুগে চীনে এর সূচনা হয়েছিল । ইতিহাস অনুযায়ী চীনের বিখ্যাত শহর থাংশানে এ মৃৎশিল্পের জন্ম হয়েছিল। আর এই কারনেই চিনের এ শহরটিকে মৃৎশিল্পের শহর বলা হয়। নব্য প্রস্ত যুগে চেক প্রজাতন্ত্রে গ্রাভেতিয়ান সভ্যতার ডলনে ভোসনিসে, জাপানের জোমোন  খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০০, রাশিয়ার সর্ব পূর্বে খ্রিস্টপূর্ব ১৪০০০  সাব-সাহারান দক্ষিণ আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকায় এর আবিষ্কারের তথ্য পাওয়া যায় । বাংলাদেশ রূপ-বৈচিত্র্যের দেশ এদেশে অতীতকাল থেকে হাজার ধরনের সংস্কৃতি পালন করা হয় যার একটি নিদর্শন হল মৃৎশিল্প। রাজশাহী গোদাগাড়ী প্রেমতুলির মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য রয়েছে। গোদাগাড়ীর কুমাররা অসম্ভব শৈল্পিক দক্ষতা ও মনের মধ্যে লুকায়িত মাধুর্য দিয়ে চোখ ধাঁধানো সব কাজ করে থাকেন এই শিল্পটি হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন অন্যতম একটি শিল্প যা বাংলাদেশের ঐতিহ্য বহন করে। বৈশাখী মেলা বাংলাদেশের অন্যতম সামাজিক উৎসব বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্য বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এই মেলা বসে বৈশাখী মেলায় অনেক কিছু পাওয়া যায়।

 গোদাগাড়ীর কুমাররা নিপূনভাবে তৈরি করে মাটির তৈরি নানা জিনিসপত্র যেমন  মাটির পুতুল, মাটির হাড়ি, মাটির ফল,কলস,সরা, মাটির তৈরি বাসন, পেয়ালা,সরাই মটকা  ইত্যাদি। প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের এই বাংলাদেশে মৃৎশিল্পচর্চা হয়ে আসছে প্রাচীন মৃৎশিল্পের মধ্যে অন্যতম হলো টেরাকোটা নকশা করা মাটির ফলক বা জিনিস ইটের মতো পুড়িয়ে তৈরি করা হতো টেরাকোটা। বাংলাদেশের প্রাচীন  শিল্পকলার পরিচয় পাওয়া যায় মাটির শিল্পে । এটা এ দেশের নিজস্ব শিল্প। হাজার হাজার বছর ধরে এদেশে মাটির শিল্পের চর্চা হয়ে আসছে এদেশের মানুষের মন যে শিল্পীর মন  মাটির তৈরি নানা রংয়ের শিল্পকর্ম তা প্রমাণ করে।

কালের বিবর্তন ও প্লাস্টিক পণ্যের সহজলভ্যতার কারণে এ শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। হারিয়ে যাচ্ছে  মৃৎ শিল্পের ঐতিহ্য। প্রকৃতিতে ছোঁয়া লেগেছে আধুনিকতার ক্রমেই মানুষ মৃৎশিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ফলে মৃৎশিল্পীরা কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন বাজারে মূল্য হ্রাস আয়-ব্যয়ের সংগতি না থাকায় অনেকেই মৃৎশিল্প ছেরে ছুটছেন অন্য পেশায়। তবে যুগের সাথে মানুষের চাহিদার তালিকায় মৃৎশিল্প দখল করতে শুরু করেছে । আধুনিকতার ছোঁয়া খুঁজতে অনেকে মৃৎশিল্প দিয়ে নিজের ঘর সাজাতে চান তাই এই ধরনের পণ্যের চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। বাঙালির ঐতিহ্য এ শিল্পের সাথে মিশে আছে।

মৃতশিল্প আমাদের বাংলার গর্ব, বাংলার ঐতিহ্য।

আমরা সবাই আমাদের এই প্রাচীন শিল্পকে টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করবো।