শরীর থেকে রোগকে দ্রুত তাড়াতে হোমিওপ্যাথির পরিবর্তে অ্যালোপ্যাথি ওষুধ অনেক বেশি কার্যকরী। তাছাড়া যেকোনো সার্জারি চিকিৎসার পর রোগীর শরীরকে সুস্থ করতে একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়ায় অ্যালোপ্যাথি ওষুধ। চিকিৎসা শাস্ত্রে, অ্যালোপ্যাথি ওষুধগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অথবা নিজে ফার্মেসি থেকে কিনে অনেকেই শরীরের রোগ ভালো করার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া শুরু করে। তবে সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো এসব অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের পুরো কোর্স সম্পন্ন না করেই রোগীরা ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয়।
অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই শরীর থেকে রোগ মুক্তি ঘটে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, রোগীর রোগ মুক্তি হয়ে যাওয়ার পরও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের পুরো কোর্স পর্যন্ত ওষুধ খেয়ে যাওয়া উচিত। নয়তো শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে জন্ম নেয় ব্যাকটেরিয়া।
তাই বিশ্ববাসীকে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং এ বিষয়ে সচেতন করে তুলতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতি বছরের মতো এ বছর ১৮ থেকে ২৪ নভেম্বর অ্যান্টিবায়োটিক সচেতনতা সপ্তাহ পালন করছে। অ্যান্টিবায়োটিক সচেতনতা সপ্তাহে আসুন জেনে নিই অ্যান্টিবায়োটিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য।
অ্যান্টিবায়োটিক resistant কী?
সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক সময় পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করলে শরীরে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয় না। যে ব্যাকটেরিয়াগুলো বেঁচে থাকে সেগুলো রোগীর শরীরে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। যার ফলে পরবর্তীতে রোগীর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার করা হলে তখন অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ আর কাজ করে না। এ অবস্থাকেই চিকিৎসা শাস্ত্রে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বলা হয়ে থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শরীরে এসব বেঁচে থাকা ব্যাকটেরিয়াকে বলা হয় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া। এরা অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতিতে অভিযোজিত হয়ে যায় বলে, নিজেদের স্বাভাবিক গতিতে বেড়ে উঠতে ও বংশবিস্তার করতে পারে। ফলে মানুষ বা পশুর শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। আগে যে অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে তাদের রোগ সেরে যেত, সেই একই অ্যান্টিবায়োটি ওষুধে তখন আর রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
সঠিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করলে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে?
সঠিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করার কারণে কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের পরও শরীরে সব ব্যাকটেরিয়া নিষ্ক্রিয় হয় না বরং নতুন আরও অনেক অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দিচ্ছে।
এর প্রধান কারণ হলো, অনেক রোগীই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের পুরো কোর্স সম্পন্ন করে না। একজন রোগীকে হয়তো সাতদিনের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সে দুদিন ওষুধ খেয়েই সুস্থ অনুভব করায় আর ওষুধ খাওয়া প্রয়োজন মনে করেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এক্ষেত্রে যা হতে পারে তা হলো: ওই ব্যক্তির শরীরের অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়াই মারা গেছে, কিন্তু সামান্য কিছু ব্যাকটেরিয়া এখনও শরীরে টিকে আছে।
ওষুধের পুরো কোর্স সম্পন্ন করা হলে শরীরে এসব ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া যেত না। এজন্য একজন ব্যক্তিকে আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ মনে হলেও, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে নির্ধারিত কোর্স অবশ্যই সম্পন্ন করতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দেশে যত্র তত্র অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন-
১. চিকিৎসক এর পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা।
২. সঠিক diagnosis ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান করা।
৩. সামান্য জ্বর বা ঠাণ্ডা হলে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা, যেখানে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো প্রয়োজন নেই।
৪. যেখানে first line antibiotic দিয়ে proper treatment possible সেখানে advance antibiotic প্রদান করা।
৫. বিশেষ করে অনেক রোগী আছেন যারা কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই নিজেরাই অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করে থাকে।
৬. বিশেষ করে অনেক medicine seller নিজেরাই সামান্য জ্ঞান নিয়ে রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক দেয়।
৭. Poultry sector বিশেষ করে মুরগি, মাছ এবং গবাদিতে ব্যাপক হারে অ্যান্টিবায়োটিক এর ব্যবহার
এর ফলে মানব জীবনে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। কারণ আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স একটি বিশাল বড় চিন্তার কারণ। কারণ এর ফলে রোগীর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।
অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কি আমাদের শঙ্কিত হবার কোনো কারণ আছে?
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এর মারাত্মক কুফল হলো যে ব্যক্তি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের পুরো কোর্স শেষ করেনি, এর ফলে তার শরীরে যে ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়েছে তা অন্য ব্যক্তিকেও আক্রান্ত করতে পারে। এভাবে একজনের শরীরে এক প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ক্ষমতা লাভ করলে, পরবর্তীতে সেটি অন্য আরো অনেকের শরীরেও সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। তাই আজকাল অনেকক্ষেত্রেই শুনতে পাওয়া যায়, চিকিৎসার জন্য অনেক ব্যয় করার পরও সামান্য ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। তাই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।