নিউজ ডেস্ক: রাজশাহী মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থেকে চাঞ্চল্যকর স্ত্রী হত্যা মামলার একমাত্র পলাতক আসামী মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪২)’কে মামলা রুজু হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে আটক করেছে র্যাব।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই দেশের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সব ধরণের অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব জঙ্গি, সন্ত্রাসী, সংঘবদ্ধ অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ী, অস্ত্রধারী অপরাধী, ভেজাল পণ্য, ছিনতাইকারী, ধর্ষণকারী, খুনি, প্রতারক ও হ্যাকারদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে।
২০ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ রাত্রী-২২.০০ ঘটিকায় রাজশাহী মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানাধীন কাশিয়াডাঙ্গা মোড়স্থ এলাকায় অপারেশন পরিচালনা করে স্ত্রী হত্যা মামলার চাঞ্চল্যকর একমাত্র পলাতক আসামী ১। মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন @ আব্দুল্লাহ (৪২), পিতা-মোঃ আবুল কাশেম, মাতা-উম্মে কুলসুম, সাং-উজানপাড়া রেলগেট, থানা-গোদাগাড়ী, জেলা-রাজশাহী’কে গ্রেফতার করে।
আটককৃত আব্দুল্লাহ আল মামুনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে পেশায় একজন রড মিস্ত্রী। মামুন আরো জানায় যে, সে প্রায় ১৪ বছর পূর্বে পারিবারিক ভাবে ভিকটিম সম্পা খাতুন (৩০)’কে বিয়ে করে। তাদের সংসার জীবনে ০২ টি ছেলে ও ০১ টি মেয়ে সন্তান রয়েছে। আব্দুল্লাহ আল মামুন কর্মসূত্রে কুমিল্লা জেলায় অবস্থান করে এবং মাঝে মাঝে ছুটিতে বাড়িতে বেড়াতে আসে এবং বাসায় এসে সে জানতে পারে যে, তার স্ত্রী তার মেজো ভাইয়ের সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত। শুধু তাই নয় তার মেজো ভাই তার স্ত্রীসহ আরো কয়েকজন মেয়েদেরকে দিয়ে দেহব্যবসা করায়। এরপর সে তার স্ত্রীকে কঠোরভাবে সতর্ক করে এবং নিজ কর্মস্থলে চলে যায়। কিছুদিন পর সে ছুটিতে বাড়ীতে এসে স্ত্রীর ব্যবহৃত ফোনে দেখতে পায় যে, বিভিন্ন লোকজনের সাথে তার স্ত্রীর অনৈতিক শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও রয়েছে। পরবর্তীতে সে তার স্ত্রীকে সংশোধনের উদ্দেশ্যে তার নিজ কর্মস্থল কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকা শুরু করে। সেখানে থাকা অবস্থায় কিছুদিন পরে সে জানতে পারে যে, তার স্ত্রী পুনরায় কর্মস্থলের অন্যান্য সদস্যের সাথেও অনৈতিক শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। পরবর্তীতে সে তার নিজের আত্মসম্মান রক্ষার্থে তার স্ত্রীকে আবারো নিজ এলাকায় রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে নিয়ে আসে। কিন্তু এলাকায় আসার পরে তার স্ত্রী আবারো আটককৃত ব্যক্তির মেজো ভাইয়ের সাথে পুনরায় অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়। ফলে আটককৃত ব্যক্তি বাধ্য হয়ে আবারো বাসা পরিবর্তন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর পাঠানপাড়ায় তার স্ত্রীর পিতার বাড়ীর কাছে একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে রাখে এবং আটককৃত মামুন তার নিজ কর্মস্থল কুমিল্লায় ফিরে যায়।
কিন্তু কিছুদিন পরে মামুন জানতে পারে তার স্ত্রী চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর ভাড়া বাসার এলাকাতে আবারো অনৈতিক কাজ শুরু করেছে। এই ঘটনা জানার পরে মামুন তার কর্মস্থল কুমিল্লা থেকে গত ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে চাঁপাইনবাবগঞ্জে তার স্ত্রীর কাছে ফিরে আসে। পরবর্তীতে মামুন ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ দুপুরে তার স্ত্রীর মোবাইল ফোনে থাকা তার স্ত্রীর অনৈতিক শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও দেখতে পায় এবং কৌশলে সেই মোবাইলটিতে থাকা মেমোরিকার্ডটি নিয়ে নেয়। তার স্ত্রী যখন জানতে পারে যে, তার অনৈতিক শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও রাখার মেমোরিকার্ডটি তার স্বামীর কাছে আছে। তখন মামুনের স্ত্রী উক্ত মেমোরিকার্ডটি উদ্ধারের জন্য প্রথমে মামুনের মেজো ভাই হারুন অর রশিদ @ কমলকে ফোন দেয় এবং মেমোরিকার্ডের ঘটনাটি বলে। হারুন অর রশিদ @ কমলের নির্দেশনা মোতাবেক মামুনের স্ত্রী সম্পা তার পরিবারের লোকজনদের সহায়তায় মামুনকে টর্চার শুরু করে এবং সারারাত একটি ঘরের ভিতর আটকে রাখে। ঘটনার দিন ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ সকালে মামুনের স্ত্রী মামুনকে আটকে রাখা ঘরে আসে। একপর্যায়ে মামুনের স্ত্রী তার ঘনিষ্ট হওয়ার চেষ্টা করে এবং ঘনিষ্টতার একপর্যায়ে তার স্ত্রীকে গলা টিপে হত্যা করে সকলের অগোচরে উক্ত বসতবাড়ী হতে পলায়ন করে। পরবর্তীতে ভিকটিম মৃত সম্পার বড় ভাইয়ের স্ত্রী মোসাঃ হালিমা শিল্পী (৪০) বাদী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ ২২.৩০ ঘটিকায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ৪। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মত র্যাব তার ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ধরার জন্য অভিযান পরিচালনা শুরু করে।
২০ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ র্যাব-৫, সিপিএসসি এর অভিযানে রাজশাহী মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানাধীন কাশিয়াডাঙ্গা মোড় হতে তাকে আটক করা হয়। উক্ত ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ৬। গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।