বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে সকাল থেকেই ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আপনাদের (ভোটারদের) সকলের কাছে আমার অনুরোধ এই ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সকল ভোটার দয়া করে সকালে উঠে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে যাবেন।’ দিনব্যাপী নির্বাচনী প্রচারে রংপুর সফরকালে তারাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে এক জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি এ আহ্বান জানান।
গত ২০ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হলে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা এবং শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নৌকা নবী হযরত নূহ (আ.) এর নৌকার প্রতীক, যা মহাপ্রলয়ের সময় মানবজাতিকে রক্ষা করেছিল।’ তিনি আরো বলেন, এই নৌকা, যে নৌকায় আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছেন এবং আপনাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করেছেন। ‘আপনারা কি নৌকায় ভোট দেবেন?’ ‘আমাকে প্রতিশ্রুতি দিন অনুরোধ করে বলেন, আপনার হাত তুলুন।’ সমাবেশে উপস্থিত লোকজন হাত তুলে নৌকার পক্ষে শ্লোগান দেয়।’
সমাবেশে তিনি রংপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম মোহাম্মদ আহসানুল হক চৌধুরী (ডিউক) এর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন এবং তাকে ভোট দেওয়ার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানান। এসময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের অসংখ্য বাস্তবায়িত উন্নয়ন কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, গত তিন নির্বাচনে জনগণ নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই সরকারের পক্ষে এটা সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের কিছু উন্নয়ন কর্মসূচি অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। তিনি উল্লেখ করেন, ‘সকল মানুষ সুন্দর জীবন পাবে; আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে কেউ অবহেলিত থাকবে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। সে কথা মাথায় রেখেই আমরা বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করতে চাই; নৌকা প্রতীক ক্ষমতায় থাকলেই এদেশের উন্নয়ন হবে।’
শেখ হাসিনা তাঁর ভাই ও বাবা-মাকে হারিয়েছেন উলেখ করে বলেন, আমার হারানোর কিছু নেই, পাওয়ারও কিছু নেই। শেখ হাসিনা বলেন, ‘তবে, আপনি যদি ভালো থাকেন, তবেই আপনার জীবন সুন্দর হবে।’ সরকার প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমার লক্ষ্য হলো আপনার সন্তানরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সুন্দর জীবন পাবে।
তারাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আতিয়া রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রংপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম মোহাম্মদ আহসানুল হক চৌধুরী (ডিউক)। প্রধানমন্ত্রী সকাল ১১টার দিকে একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করেন এবং তারপর সড়কপথে তারাগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা করেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারতের ঐতিহ্য অনুসরণ করে গত ২০ ডিসেম্বর সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন।
এছাড়াও, ২৩ ডিসেম্বর তিনি ভার্চুয়ালি ছয়টি জেলায় নির্বাচনী সমাবেশ করেন। জেলাগুলো হলো- কুষ্টিয়ার পাবলিক লাইব্রেরি মাঠ, ঝিনাইদহে উজির আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠ, সাতক্ষীরার সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নেত্রকোনার জেলা স্টেডিয়াম এবং রাঙ্গামাটি জেলার শেখ রাসেল স্টেডিয়াম। পাশাপাশি বরগুনা জেলার বামনা ও পাথরঘাটা উপজেলা থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যালয়।
২১ ডিসেম্বর তিনি তেজগাঁও আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি পাঁচটি জেলা-পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, নাটোর, পাবনা এবং খাগড়াছড়িতে নির্বাচনী জনসভাও করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর পীরগঞ্জ সফরকে কেন্দ্র করে গোটা জেলার পাশাপাশি পীরগঞ্জের সর্বত্র বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। এর আগে ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পীরগঞ্জে একই মাঠে জনসভায় ভাষণ দেন। ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি তরফমৌজা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে একটি পথসভা এবং লালদীঘির ফতেহপুর জয়সদনে দলীয় কর্মী সভায় যোগ দিয়েছিলেন। মিঠাপুকুরে সমাবেশ : পরে প্রধানমন্ত্রী পীরগঞ্জ যাওয়ার পথে মিঠাপুকুর উপজেলায় আরেকটি নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন।
তিনি সবার সঙ্গে রংপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাশেক রহমানের পরিচয় করিয়ে দেন এবং তাকে ভোট দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’কে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ পরিণত করতে আওয়ামী লীগের হাতকে শক্তিশালী করতে আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ছাত্র ও যুবকরা স্মার্ট ও দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে উঠবে। আমরা ভবিষ্যতের জন্য তাদের গড়ে তুলব আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ ও ‘স্মার্ট সোনার বাংলা।’ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলটি নির্বাচনী পথ উন্মুক্ত করায় যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে আওয়ামী লীগের প্রতিটি প্রার্থীকে সতর্ক করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন করতে হবে, আবারও আপনাদের সেবা দিতে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে।
’ বাংলাদেশের মানুষকে নিজের পরিবার উল্লেখ করে- শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বাবা বাংলাদেশের মানুষের জন্য জীবন দিয়েছেন। আমিও আপনাদের পাশে আছি, আপনাদের সেবা করব।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মানুষের মনে শান্তি, ঘরে খাবার ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে এবং দেশের মানুষ শিক্ষা, চিকিৎসা ও সুন্দর জীবন পেয়েছে।