এস কে সরকার, নিয়ামতপুর, নওগাঁ: এখন গ্রামাঞ্চলের প্রত্যেক বাড়িতে 'মর্টার' হয়ে গেছে। মানুষ সব কাজ এখন মর্টারের পানিতেই করে।
পুকুরে কেউ আর গোসল করতে যায় না। তাই পুকুরে কারো কোনো জিনিসও হারায় না। আমাদেরও আর দরকার লাগে না। আজ হোক, কাল হোক এই পেশাটা একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে ভাই। এমন আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন মো. রিপন মিয়া। পেশায় বেদে হলেও তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে পুকুরে হারানো বিভিন্ন জিনিসপত্র খুঁজে দেন আর বিভিন্ন রকম তাবিজ বিক্রি করেন।
গত রোববার দুপুরে নিয়ামতপুর উপজেলার চৌরাপাড়া এলাকায় তার সঙ্গে কথা হয়। রিপন মিয়ার বাড়ি ঢাকার সাভারে। তারা বহর নিয়ে তাঁবু গেড়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা এলাকায়। তিনি জানালেন, বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে মানুষের পুকুরে হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন জিনিসপত্র খুঁজে দেন। আর তাবিজ, নজরকাঠি, বাতের চুড়ি, কড মাছের কাঁটা, ঝুনঝুনি বিক্রি করেন।
আরও জানালেন, এটা আমার বাপ-দাদার পেশা। বংশ পরম্পরায় তাই আমিও এই পেশায় আছি। আমার দাদা বেদে বহরের সর্দার ছিল। আমার বাবা এখন সর্দার। বাবার পরে আমি সর্দার হবো। তবে আমার ছেলেমেয়েরা এই পেশায় থাকবে কিনা বলতে পারছি না।
আলাপচারিতায় জানা গেল, তারা গত ১মাস আগে চৌডালাতে এসেছেন। থাকবেন আরও ১৫দিন। তারপর আবার চলে যাবেন অন্য কোনো এলাকায়। এভাবে ছয় মাস দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ান তারা। বাকি ছয়মাস বাড়িতে থাকেন। তখন আর তাবিজ কবজ বিক্রি করেন না। তাদের বহরে ১৫ টি পরিবারে প্রায় ৮০ জন লোক রয়েছে। তাদের সবাই কাজ করেন। কেউ সাপ ধরে, কেউ সাপ খেলা দেখায়। মেয়েরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে সিংগা লাগায়, ঝাড়ফুক দেয়, তাবিজ বিক্রি করেন।
তবে আক্ষেপ করে বললেন, নতুন প্রজন্ম আর এই পেশায় আসতে চাচ্ছে না। তারা বাপ-দাদার এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছে। তাছাড়া লোকজন আগের চাইতে অনেক সচেতন হয়ে গেছে ভাই। তাবিজ-কবজ, ঝাড় ফুকে কম বিশ্বাস করে। এখন আমাদের দিন চলাই খুব কষ্টকর হয়ে গেছে। আজকে (রোববার ) এখন পর্যন্ত কোনো রোজগার হয় নাই। মনে হয় খালি হাতেই ফিরতে হবে। এই বলে আবার বেরিয়ে পড়লেন রিপন মিয়া।