২৩ নবিকসহ বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ জিম্মি করার ৮ দিন পেরোনোর পর অবশেষে মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জাহাজের মালিকপক্ষ জানিয়েছে, তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ হলেও এখনও মুক্তিপণের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
জাহাজটি দখলে নেয়ার ৯ দিনের মাথায় বুধবার (২০ মার্চ) বিষয়টি নিশ্চিত করে এমভি আবদুল্লাহর মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, জলদস্যুরা যোগাযোগ শুরু করেছে। এখন আলোচনার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।
যোগাযোগের বিষয়টি স্বীকার করলেও কি বিষয়ে কথা হয়েছে বা জলদস্যুরা মুক্তিপণ দাবি করেছে কি না সে বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি মালিকপক্ষ।
তিনি বলেন, থার্ড পার্টির মাধ্যমে জলদস্যুদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হয়েছে। জাস্ট প্রাথমিক আলাপ হয়েছে। মুক্তিপণ কিংবা অন্য কোনো বিষয়ে এখনও বলার মতো কোনো আলাপ হয়নি। যেহেতু, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর, এ মুহুর্তে আর কোনো তথ্য দেয়া সম্ভব নয়।
নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, যোগাযোগ শুরুর দিকটি ইতিবাচক। মালিকপক্ষ ও বিমাকারী প্রতিষ্ঠান জলদস্যুদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সমঝোতায় পৌঁছাবে বলে তিনি আশা করছেন।
অবশ্য জলদস্যুদের যোগাযোগের আগেই মালিকপক্ষ সমঝোতার নানা প্রক্রিয়ার কাজ গুছিয়ে এনেছিল বলে সূত্র জানায়।
ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুরা গত ১২ মার্চ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টার দিকে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ নামে জাহাজটিকে ২৩ নাবিকসহ দখলে নেয়। জাহাজটি আফ্রিকার মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে যাচ্ছিল। জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির স্টিল অ্যান্ড রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন।
বিজ্ঞাপন
জাহাজে থাকা নাবিকেরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।
জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে এখন সোমালিয়ার নুগাল প্রদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা শহর গদবজিরানের কাছাকাছি উপকূলে নোঙ্গর করে রেখেছে জলদস্যুরা।
জিম্মি করার পর থেকে নাবিকদের সঙ্গে তাদের পরিবার ও মালিকপক্ষে কয়েকদফা যোগাযোগ হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, জলদস্যুরা তাদের কোনো ধরনের চাপ কিংবা নির্যাতন না করলেও তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছেন। দ্রুততার সঙ্গে জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তির আকুতিও জানিয়েছেন তারা।
এ অবস্থায় জাহাজের মালিকপক্ষ এবং সরকার জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের অপেক্ষায় ছিল। আন্তর্জাতিক মহল থেকে চাপ প্রয়োগ কিংবা সামরিক অভিযানের মাধ্যমে জিম্মিদের মুক্ত করার প্রস্তাব এলেও তাতে সাড়া দেয়নি মালিকপক্ষ। বরং তারা তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদও সর্বশেষ জানিয়েছিলেন, বিমা প্রদানকারী ও জাহাজ মালিকদের সমন্বয়ে গঠিত সংস্থা ‘পিঅ্যান্ডআই ক্লাব’র মাধ্যমে ‘সমঝোতার’ মধ্য দিয়ে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ ও নাবিকদের মুক্ত করার প্রচেষ্টা চলছে।
কবির গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন ‘এমভি আবদুল্লাহ’ আগে ‘গোল্ডেন হক’ নামে পরিচিত ছিল। ২০১৬ সালে তৈরি বাল্ক কেরিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। গত বছর জাহাজটি এসআর শিপিং কিনে নেয়। বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী এরকম মোট ২৩টি জাহাজ আছে কবির গ্রুপের বহরে।
এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ভারতের উপকূলে আরব সাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের আরেকটি জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।