রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপিতে অনুপ্রবেশ করে নৈরাজ্য শুরু করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। রাজনৈতিক পরিচয়ে দখলদারি ও চাঁদাবাজিসহ নতুন করে শুরু হয়েছে নানা অপকর্ম। এতে চরম অসহায় সাধারণ জনগণ। অভিযোগ করেও মিলছে না প্রতিকার। উল্টো ভুক্তভোগীদের মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, পদ্মা নদী পেরিয়ে জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহের ভগবন্তপূর পেটাও আলাতুলী আন্তঃজেলা, ফুলতলা ভাটোপাড়া ও বড়গাছি পেটাও বিদিরপুর ফেরিঘাট দিয়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের যাতায়াত। সেখানে রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি ও দখলাবাজিতে চরম অসহায় হয়ে পড়েছেন চরের বাসিন্দারা। হাসিনা সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের নেতারা চাঁদাবাজি করলেও বর্তমানে ঘাটালরা নিজেদের বিএনপির নেতাকর্মী পরিচয় দিচ্ছেন।
সূত্র জানিয়েছে, ঘাটাল মর্তুজা, এনামুল ও দুলালের নেতৃত্বে ৩০ জনের একটি চক্র চরবাসীর কাছ থেকে জোরপূর্বক অতিরিক্তি টাকা আদায় করে আসছেন। এক মণ ধান পারপারে ২০ টাকা ভাড়া নেওয়ার কথা থাকলেও নেওয়া হয় ৩০ টাকা। ওষুধ পারাপারে কোনো টাকা নেওয়ার নিয়ম না থাকলেও কার্টুনপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা আদায় করেন ঘাটালরা। গরু পারাপারে নেওয়া হয় ১০০ টাকা করে। নায্য ভাড়া নিতে বললে নদীর মাঝপথে নৌকায় আটকে রেখে দেন মাঝিরা। ঘাটালের নির্দেশে তারা এমনটা করেন। প্রতিবাদ জানালে মামলায় ফাঁসানোর হুমকিও দেন প্রভাবশালীরা। চর আষাড়িয়াদহের এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছেন আব্দুল্লাহিল কাফি নামে সাবেক এক ছাত্রনেতা। তিনি বলেন, প্রভাবশালীরা আমাকেও হুমকি দিয়েছে। স্থায়ীভাবে সমাধানের দাবিতে সম্প্রতি রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার, জেলা পরিষদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, গোদাগাড়ী ঘাটের ইজারাদার গোলাম মর্তুজা বলেন, সরকারী চাট অনুযায়ী ভাড়া নিচ্ছি। রশিদ বই দেয়া আছে আমাদের। আমরা রশিদ দিয়ে দিচ্ছি। ৫ আগস্টের পরে কিছু অসাধু লোক আমাদের থেকে চাঁদা দাবি করছিলো আমরা দেইনি। আমাদেরকে নাহ্যভাড়া দিতে দেয়নি৷ তারপর আমরা জেলা প্রশাসক, ইউএনও, জেলা পরিষদে আমরা দরখাস্ত দিয়েছি। যেনো প্রশাসন দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করা হয়। আমরা ভাড়া কমই নিচ্ছি গরুর ভাড়া ১২০ আমরা ১০০ নিচ্ছি। ১ মনের ভাড়া ২০ টাকা আমরা ২ মনে ৩০ টাকা নেই। দলীয় বিষয় জানতে চাইলে তারা বলেন আমরা সাধারণ মানুষ কোন দল করিনা৷
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, গোদাগাড়ী ঘাটের ইজারাদার গোলাম মর্তুজা বলেন, সরকারী চাট অনুযায়ী ভাড়া নিচ্ছি। রশিদ বই দেয়া আছে আমাদের। আমরা রশিদ দিয়ে দিচ্ছি। ৫ আগস্টের পরে কিছু অসাধু লোক আমাদের থেকে চাঁদা দাবি করছিলো আমরা দেইনি। আমাদেরকে নাহ্যভাড়া দিতে দেয়নি৷ তারপর আমরা জেলা প্রশাসক, ইউএনও, জেলা পরিষদে আমরা দরখাস্ত দিয়েছি। যেনো প্রশাসন দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করা হয়। আমরা ভাড়া কমই নিচ্ছি গরুর ভাড়া ১২০ আমরা ১০০ নিচ্ছি। ১ মনের ভাড়া ২০ টাকা আমরা ২ মনে ৩০ টাকা নেই। দলীয় বিষয় জানতে চাইলে তারা বলেন আমরা সাধারণ মানুষ কোন দল করিনা৷
তিনি আরোও বলেন তারা আমাদের ঘাটে চাঁদাবাজি করতে এসেছিল। আমারা তাদের কোনো চাঁদা দেইনি এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি। তারা আমাদের ঘাটের নামে বদনাম রটাচ্ছে যেন তাদের চাঁদাবাজির ঘটনা টা ধামাচাপা হয়ে যায় ।
সূত্র জানায়, গত বছরের নভেম্বরে জেলার বাগমারায় গোলাম মোস্তফা নামে এক মৎস্যচাষীর কাছে ১৫ টাকা লাখ চাঁদা দাবি করেন বিএনপির স্থানীয় কয়েকজন নেতাকর্মী। চাঁদা না দেওয়ায় ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুরসহ ৪৫ বিঘা জমি দখল করা হয়। পরে ওই পুকুরের কয়েক লাখ টাকার মাছ লুটসহ পুকুরে বিষ দিয়ে নিধন করা হয় প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ। সূত্রের দাবি, গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ওই চাঁদাবাজরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। এলাকায় আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি এনামুল হক ও আবুল কালাম আজাদের প্রশ্রয়ে হেলমেট বাহিনী তৈরি করে ত্রাস চালায়।
ভুক্তভোগী মৎস্যচাষী গোলাম মোস্তফা বলেন, বাগমারা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামাল হোসেনের প্রশ্রয়ে গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুনসুর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির একটি গ্রুপ আমার পুকুর দখল করে মাছ নিধন করেছে। তারা আমাদের ওপর হামলাও চালায়। এলাকায় সেই হেলমেট বাহিনী গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার মিছিলেও হামলা করেছিল। হেলমেট বাহিনী এখন বিএনপির হয়ে মাঠে কাজ করছে। তাদের আতঙ্কে রায়হান নামে এক শ্রমিক এলাকাছাড়া হন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামাল হোসেন বলেন, মীমাংসার জন্য সবাইকে নিয়ে আমরা মিটিং করে সমাধান করেছি।
জেলার দুর্গাপুরে জেলা বিএনপির সদস্য মো. সাইদুর রহমান মন্টু সমর্থিত নেতাকর্মীরা পৌর ও উপজেলায় চাঁদাবাজি ও দোকানপাট দখলবাজি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক বিশ্বনাথ সরকার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি চলছে নগরীর সিটি বাইপাস গরুর হাটে। ভারতীয় গরু বলে আটকের ভয় দেখিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা চাঁদাবাজি করছেন বলে খামারি ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। রোববার ও বুধবার হাটে গরুপ্রতি বাড়তি ২০০টাকা করে দিতে হচ্ছে। প্রতি হাটে অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। পবার দামকুড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলামের ভাই আওয়ামী লীগ কর্মী শরীফুল ইসলামের নেতৃত্বে চলছে এসব চাঁদাবাজি।
নগরীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়েও চাঁদাবাজিসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠে। গত বছরের ২১ নভেম্বর সন্ধ্যায় নগরীর কালেক্টরেট মাঠে সোহেল রাজ নামে জাসদ ছাত্রলীগের এক নেতাকে এমন অভিযোগে শিক্ষার্থীরা গণধোলাই দেন। পরে পালিয়ে গিয়ে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। যদিও সোহেলের দাবি, তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিটিং থেকে বাসায় ফিরছিলেন। পথে রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তার ওপর হামলা চালান। তবে মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুল রহমান সৌরভ বলেন, সোহেল হঠাৎ করে নিজেকে সমন্বয়ক দাবি করেছেন। বিভিন্ন সরকারি দফতরে গিয়ে চাঁদাবাজি শুরু করেছিলেন তিনি।
গত ১৭ ডিসেম্বর রাতে নগরীর গণকপাড়া এলাকায় ‘হোটেল গ্র্যান্ড’ নামে একটি আবাসিক হোটেলে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে ছাত্রদলের দুই নেতার বিরুদ্ধে। পরে ডাকাতি ও ভাঙচুর চালানো হয় বলেও হোটেলটির মালিকপক্ষ দাবি করে। হোটেলটির মালিকের ভাতিজা রোকন সরকার বলেন, ৫ আগস্টের পর ছাত্রদলের নেতারা বিভিন্ন সময়ে এসে ৫-১০ হাজার করে টাকা নিয়ে গেছে। জুয়েল নামে একজন ফোন দিয়ে চাঁদা চায়। সর্বশেষ রাতে এসে তারা ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমরা দিতে রাজি না হওয়ায় ডাকাতি করেছে।
জেলার দুর্গাপুরে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে রবিউল ইসলাম ও মনিরুল ইসলাম নামে দুই প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও দখলবাজির অভিযোগ উঠেছে। তাদের নেতৃত্বে ৫ জনের একটি চক্র সাধারণ কৃষকদের জিম্মি করে এলাকায় নানা অপকর্ম করছেন বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ। তাদের এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় চঞ্চল আলী নামে এক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
চঞ্চল আলী বলেন, আমরা পারিবারিকভাবে বিএনপি করি। আমার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা মামলা করেছেন রবিউল। মনিরুল নামে একজনকে পিটিয়ে দাত ভেঙে আহত করার কথা এজহারে উল্লেখ করেছেন তিনি। কিন্তু অনেক আগেই তার দাত ভাঙে বলে মনিরুলের চাচা খাদেমুল লিখিত স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। প্রকৌশলী চঞ্চল আরও বলেন, মিথ্যা মামলায় ১৫ দিন কারাভোগের পর আমি জামিনে মুক্তি পাই। এখনও তারা আমাকে হুমকি দিচ্ছে। আমি সুবিচার চেয়ে ও স্বরাষ্ট্র সচিব এবং রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দিয়েছি। মামলার টেনশনে আমার বাবা স্ট্রোক করেছেন। রবিউল ও মনিরুলের কারণে আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। আমি মামলা থেকে অব্যহতি ও সেই চাঁদাবাজদের উপযুক্ত বিচার চাই।
মোস্তাফিজুর রহমান নামে স্থানীয় এক মৎস্যচাষী বলেন, ৩ একর খাস জমির পুকুর আমি লিজ নিয়েছিলাম। রবি ও তার বাহিনী ৫ আগস্ট প্রেক্ষাপট চেঞ্জের পর দখল করে নিয়েছে। সেখানে আমার ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিও ছিল। মজিবর রহমান নামে স্থানীয় এক কৃষক রবিউল ও মনিরুলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তিনি বলেন, বিএমডিএ থেকে গভীর নলকূপ নিয়ে আমরা চাষাবাদ করতাম। তালা ভেঙে জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে রবিউল ও তার লোকজন। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত রবিউল ইসলাম বলেন, কে কী বলল দেখে লাভ নাই। সরেজমিনে তদন্তে আসতে হবে, তাহলে সত্য জানা যাবে। এ সময় নিজেকে ইউনিয়ন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন তিনি।
এসব ব্যাপারে রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের (ডিএসবি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল আলম বলেন, পুলিশ যথাযথভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছে। অভিযোগ পেলে আমরা প্রকৃতভাবে অনুসন্ধান করবো। অভিযোগ মিথ্যা হলে অভিযুক্তরা মামলা থেকে অব্যাহতি পাবেন। আর সত্য প্রমাণ হলে আইন অনুযায়ী বিচার হবে।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাশেদ রাজন বলেন, রাজশাহীতে চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর এমন কর্মকাণ্ড কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। রাজনীতি জনগণের কল্যাণে পরিচালিত হওয়ার কথা, অথচ এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রাজনীতির সুনামকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আমি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অনুরোধ করব, এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের দলীয় পরিচয় বিবেচনা না করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকেও তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অপরাধমুক্ত সমাজ এবং রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির আহবায়ক এডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা বলেন, দলীয় পরিচয়ে কেউ অপকর্ম করলে আমরা তাদের ছাড় দেব না। অবশ্যই কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজশাহী জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, চাঁদাবাজি-দখবাজির বিরুদ্ধে আমাদের দলের কঠোর অবস্থান। হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা রয়েছে। আমরা এসবের বিরুদ্ধে কাজ করছি। কেউ অপকর্মে জড়ালে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।