সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচার কেন্দ্র করে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে (বঙ্গবন্ধু জাদুঘর) ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে করা হয় অগ্নিসংযোগ। পরে একটি ক্রেন, একটি এক্সকাভেটর ও দুটি বুলডোজার দিয়ে সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেয়া হয় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি। কালের সাক্ষীতিন তলাবিশিষ্ট বাড়িটি বাড়িটি যেন এক মুহূর্তে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ক্ষুদ্র একটি অংশ এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়িটির আশেপাশে থাকা বাকি স্থাপনাও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে দেখা যায়, ধসে পড়া ছাদ ও রেলিংয়ের ভাঙা অংশ থেকে বেরিয়ে আসা রড সংগ্রহের চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। কেউ আবার হাতুড়ি পিটিয়ে ধসে পড়া ছাদ ভাঙার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ এখানে-সেখানে পড়ে থাকা লোহার রড ও ইস্পাতের অংশ কুড়িয়ে নিচ্ছেন।
সারা রাত ভাঙার কাজে অংশ নেওয়ার পর কিছুটা বিশ্রাম নেয় যান্ত্রিক দানব এক্সকাভেটর। সকাল ৭টার পর সেটিও আবার সক্রিয় হতে দেখা যায়। নতুন করে অংশ নেয় অসম্পূর্ণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে।
এ সময়ও কয়েকজন সংবাদকর্মীকে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় খবর সংগ্রহে। মাল্টিমিডিয়ার কর্মীদের সরাসরি লাইভে অংশ নিতে দেখা যায়। উৎসুক জনতার উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।
শুধু ধানমন্ডির বাড়ি নয়, বুধবার রাতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধাসদনেও। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, ভোলা ও পিরোজপুরে শেখ হাসিনার আত্মীয় এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িসহ বিভিন্ন ভাস্কর্য-ম্যুরাল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। খুলে ফেলা হয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামফলক।
জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে বুধবার রাত ৮টার পর বিপুল সংখ্যক মানুষ ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জড়ো হন। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ছাত্র-জনতার ভিড়। একপর্যায়ে ছাত্র-জনতা গেট ভেঙে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের তিন তলাবিশিষ্ট বাড়িটির ভেতরে ঢুকে শুরু করে ভাঙচুর। কেউ কেউ লাঠিসোঁটা ও শাবল হাতে ভাঙচুরে অংশ নেন। কেউ কেউ আবার জানালার গ্রিল, কাঠের ফ্রেম ও ফটকের অংশবিশেষ ভেঙে নিয়ে যান।
রাত ১১টার দিকে একটি ক্রেন ও একটি এক্সকাভেটর ৩২ নম্বর বাড়ির সামনে উপস্থিত হয়। শুরু হয় বাড়ি ভাঙার কাজ। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ বাড়িটির একপাশ ভাঙা শেষ হয়। রাত ১টার দিকে আনা হয় আরও দুটি বুলডোজার। সেগুলো দিয়ে বাড়িটির পাশে অবস্থিত দুটি স্থাপনা ভাঙা শুরু হয়। একদিকে চলে ভবন ভাঙার কাজ, অন্যদিকে ভবনটির উল্টোপাশে খোলা জায়গায় প্রজেক্টরে দেখানো হচ্ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের প্রামাণ্যচিত্র। সেখান থেকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলা হচ্ছিল, ‘যাদের ভবন ভাঙার ইচ্ছা আছে, তারা সামনে গিয়ে ভেঙে আসেন। আর এখানে যারা প্রামাণ্যচিত্র দেখতে চান, তাদের সুযোগ করে দেন।’
এ সময় ৩২ নম্বর সড়কের ওপর দুটো পুলিশ ভ্যান ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। মধ্যরাতে সেখানে উপস্থিত হন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তবে, তারাও একসময় ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
সেখানে উপস্থিত বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা জানান, মুজিবের বাড়ির শেষ ইটটি গুঁড়িয়ে না দেওয়া পর্যন্ত তারা সেখান থেকে নড়বেন না।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলছিল ভবন ভাঙার কাজ। এরপর ঘণ্টাখানেকের জন্য বিরতি দেওয়া হয়। সকাল ৭টা থেকে ফের শুরু হয় ভবন ভাঙার কাজ। ভবনটি পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিতে আরও সময় লাগতে পারে বলেও জানান তারা।
৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙা ছাড়াও বুধবার রাতে ধানমন্ডির ৫ নম্বরে অবস্থিত শেখ হাসিনার বাড়ি সুধাসদনে আগুন দেওয়া হয়।