নিউজ ডেস্ক: হারিয়ে যাওয়ার একুশ বছর পর ভারত থেকে বাবা-মায়ের কাছে ফিরলেন মতিউর রহমান (৩৬) নামে এক যুবক। শুক্রবার (২১ জুলাই) সকাল ৯টা থেকেই স্বজনরা বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্টে মতিউরের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন বাবা-মাসহ স্বজনরা।
দুপুর আড়াইটার দিকে ভারতের ফুলবাড়ী ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্টে মতিউর রহমানকে নিয়ে আসেন বিএসএফ ও ভারতের শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের নিতিশ শর্মা ও সহযোগী মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. স্বরালি কে কোন্ডউইলিকার। তারা তাকে বিজিবি সদস্য ও ইমিগ্রেশনের এএসআই খায়রুল ইসলামের মাধ্যমে পরিবারের কাছে তুলে দেন। জানা যায়, ২০০২ সালে ১৫ বছর বয়সে হারিয়ে যান মতিউর। সে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আখানগর ইউনিয়নের ঝারগাঁও গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে। সে হারিয়ে যাওয়ার পর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিল তার পরিবার।  
পরে ২০১৯ সালের জুনে ভারতের শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের কর্মীরা মহারাষ্ট্রের কারজাত এলাকার এক রাস্তা থেকে মতিউরকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন। সংগঠনটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মানুষ, বিশেষ করে যারা রাস্তায় থাকেন, তাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে কাজ করে। মতিউরকে উদ্ধার করার পর চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে সে সিজোফ্রেনিয়ার রোগী হিসেবে শনাক্ত করেন চিকিৎসকরা। পরবর্তীতে, সুস্থ হলে চিকিৎসকেরা জানতে পারেন, মতিউর বাংলাদেশি। মহামারি করোনা শুরু হলে মতিউরের পরিবার সন্ধানের বিষয়টি স্থবির হয়ে পড়ে।
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আহমেদাবাদের বেসরকারি সংস্থা ‘স্নেহালয়’ বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত হয়। মতিউরকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে নোয়াখালীর গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের রাহা নবকুমার ও তার স্ত্রী তন্দ্রা বড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের নীতিশ শর্মা। রাহা নবকুমার ও তন্দ্রা বড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে এক সময় ঠাকুরগাঁওয়ে মতিউরের স্বজনদের খুঁজে বের করে ২৭ জুন মতিউরকে বাংলাদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কাগজপত্র জটিলতার কারণে তাকে সেদিন দেশে পাঠানো হয়নি। পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের নীতিশ শর্মা বলেন, ২০১৯ সালে জুনে মতিউরকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় উদ্ধার করি। পরে চিকিৎসার একপর্যায়ে জানতে পারি সে বাংলাদেশি। এরপরই তার পরিবার সম্পর্কে জেনে তাকে দেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরিবারের কাছে তাকে হস্তান্তর করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের সহযোগী মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. স্বরালি কে কোন্ডউইলিকার বলেন, আমরা মতিউরকে অসুস্থ অবস্থায় পেয়েছিলাম। তার রোগটি খুবই জটিল। এ রোগটি সম্পর্কে অনেকে জানে না। অনেক জায়গা ও গ্রামে এ রোগের চিকিৎসা নেই। এ কারণে এ রোগের আক্রান্তরা বাড়ি থেকে হারিয়ে যায়। যেকোনো জায়গায় চলে যায়।
পুলিশের এএসআই খায়রুল ইসলাম বলেন, মতিউর রহমান দীর্ঘদিন ধরে ভারতে অবস্থান করছিলেন। তিনি ভারত-বাংলাদেশের হাইকমিশনার ও এনজিওর মাধ্যমে দেশে ফিরেছেন। ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে তাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। দেশে ফিরে মতিউর রহমান অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ভারতে ছিলাম। আজ দেশে ফিরে বাবা-মায়ের কাছে যাচ্ছি। খুব ভালো লাগছে।  ঠাকুরগাঁও জেলার আখানগর ইউপি চেয়ারম্যান রোমান বাদশা বলেন, ২১ বছর আগে আমার ইউনিয়নের শহিদুল ইসলামের বড় ছেলে হারিয়ে গিয়েছিল। দীর্ঘ একুশ বছর পর সে ভারত থেকে দেশে এসেছে। খবর পেয়ে তার পরিবারকে নিয়ে মতিউরকে নিতে ছুটে এসেছি। সত্যিই আনন্দ লাগছে। মতিউরের মা মর্জিনা বেগম বলেন, একুশ বছর পর ছেলেকে পেয়েছি। বুকের ধন ফিরে এসেছে। ছেলেও জড়িয়ে ধরেন তার মাকে। বাবা শহিদুল ইসলাম ও ছোট বোনের আনন্দের কান্নায় এক আবেগঘন হয়ে উঠে বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি আইসিপি চত্বর।
মতিউরের বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, একুশ বছর পর ছেলেকে পেয়ে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে ভারতের শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। তাদের জন্যই আজ আমাদের ছেলেকে পেলাম। এ আনন্দ প্রকাশ করার তো নয়। সূত্র ইত্তেফাক।